মনে পড়বে রিকশার রং, ঘুড়ির নাচন, নদী-নৌকা ও সন্ধ্যা পাখির স্মৃতি: মিলার

‘রিকশার রং, চালকের মুখের কথা, পুরান ঢাকার ছাদ, তারে বেঁধে যাওয়া ঘুড়ির নাচন এবং সন্ধ্যার আকাশে পাখি’—এসব স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। গতকাল শুক্রবার ঢাকা ছাড়ার আগে তিনি লিখেছেন, ‘গত তিন বছর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমার জীবনে বড় সম্মান এবং আনন্দের। ’

কভিড মহামারি পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিদায়ী সাক্ষাৎ হয়নি রাষ্ট্রদূত মিলারের। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত্গুলোতে তিনি সুসম্পর্কের বার্তা দিয়েছেন।

একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুক পেজে গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রদূত মিলারের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। মিলার লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে আমার তিন বছরের প্রিয় স্মৃতি জানতে চাওয়া হয়েছে। সব স্মৃতি বর্ণনা করা অসম্ভব। কিন্তু আমি জানি, রিকশার রং আর চালকদের মুখের কথা মনে পড়বে। পুরান ঢাকার ছাদ আর তারে বেঁধে যাওয়া ঘুড়ির নাচানাচি, সন্ধ্যার আকাশের পাখিরা স্মৃতি হয়ে থাকবে। আরো মনে থাকবে স্কুল ইউনিফর্ম পরা শিশুদের গ্রামের রাস্তা ধরে বাড়ি যাওয়া, জাহাজভর্তি চট্টগ্রামের নদী, কক্সবাজারের চাঁদের মতো নৌকা—পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নৌকা। সিলেটের গাঢ় সবুজ পাহাড় আর বরিশালের উদ্দাম সবুজ, বান্দরবানের পাহাড় ও সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভে সকালের কুয়াশা মনে পড়বে। ’

রাষ্ট্রদূত মিলার লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক দিন দিন আরো শক্তিশালী হবে। সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি যেমন ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আসল পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে দুই দেশের নাগরিকদের, বন্ধুদের, মানুষের সম্পর্ক। তিনি লিখেছেন, ‘আশা করি, দুই দেশের জনগণের বন্ধনকে শক্তিশালী করতে আমি কিছুটা হলেও অবদান রেখেছি। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণাও আছে মিলারের লেখায়, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম, আমার প্রথম আট মাসে আমি বাংলাদেশের আটটি বিভাগ ঘুরে দেখব। এই মহান দেশের এত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পারা, তাদের অনন্য উষ্ণতা ও উদারতা অনুভব করতে পেরেছি। আমি সত্যিই ভাগ্যবান। ’

রাষ্ট্রদূত মিলার আরো লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের আবেগ-অনুভূতির স্মৃতি আমি ধারণ করব। এই অসাধারণ দেশে বিশেষ সুবিধা পাওয়া একজন অতিথি হওয়ার সুযোগের জন্য আমি কৃতজ্ঞতায় ভরা হৃদয় নিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ’

মিলার শেষ বার্তায় লিখেছেন, ‘আমার একটি আন্তরিক চাওয়া আছে। আপনারা আমাকে ও আমার পরিবারকে যে উষ্ণতা ও সহযোগিতা দেখিয়েছেন, রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস যখন আসবেন, তাঁকেও তা দেখাবেন। ’

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর আগে গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রদূত মিলারের সময়ের কয়েকটি ছবি, ভিডিও প্রকাশ করে এক টুইট বার্তায় লিখেছে, ‘বাংলাদেশ আপনার শূন্যতা অনুভব করবে। ’

ওই টুইট বার্তায় রাষ্ট্রদূত মিলারের একটি বক্তব্য ছিল। মিলার বলেছেন, ‘৩৫ বছর ধরে আমেরিকার কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে আমি এত চিন্তাশীল ও দয়ালু মানুষের দেশে দায়িত্ব পালন করিনি। ’

আর্ল রবার্ট মিলার ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস শিগগির ঢাকায় আসবেন।