মধ্যরাতে হুমকির পর সকালে শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দিল ছাত্রলীগ

 

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা এ.কে ফজলুল হক হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের এক নেতা। সোমবার (১১ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সিট ছেড়ে দিতে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জিনিসপত্রসহ তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই ছাত্র রুমের সামনে জিনিসপত্র নিয়ে অবস্থান করছেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল শের-ই বাংলা হল ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আকিব জাভেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি শের-ই বাংলা হলের ১২৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। আকিবের বাড়ি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর গ্রামে।

ভুক্তভোগী ও হল সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারির প্রথম দিকে আবাসিকতার জন্য আবেদন নেয় হল প্রশাসন। তারপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ফেব্রুয়ারিতে। মার্চের প্রথমে হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ১২৯ নম্বর কক্ষে ওঠেন আকিব। ওই বেডে ২০১৫-১৬ সেশনের আশিক মাহমুদ নামের এক শিক্ষার্থী ছিলেন। আকিব তার সাথে একই বেডে থাকছিলেন । গত ৮ এপ্রিল আশিক চলে গেলে আকিব ওই বেডে ওঠে।

আকিব জানান, ডাবলিং করে থাকা কালেও ছাত্রলীগ নেতা রাতুল এসে তাকে হুমকি দিয়েছিল। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে এসে তাকে সিট থেকে নেমে যেতে বলেন এবং সকাল নয়টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।

আকিব অভিযোগ করেন, সকাল নয়টার দিকে রাতুলের নেতৃত্বে সাত-আটজন এসে তার জিনিসপত্র রুম থেকে বের করে দিয়েছেন। সেখানে কমল নামের এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দিয়েছেন। বর্তমানে আকিব তার জিনিসপত্রসহ ১২৯ নম্বর রুমের সামনে অবস্থান করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল বলেন, ১২৯ নম্বর কক্ষে আমার এক বন্ধু থাকতো। তার সাথে কথা ছিলো, সে চলে যাওয়ার সময় আমাকে সিটটা দিয়ে যাবে। আমার এক ছোট ভাই সেখানে তার জিনিসপত্র রেখে আসছিল। কিন্তু ওই বন্ধু আমাকে না জানিয়ে চলে গেছে। পরে গতকাল রাতে গিয়ে দেখি আকিব নামের এক ছেলে ওই সিটে থাকছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে আকিবের জন্য অন্য একটা কক্ষে সিটের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ওই ছেলে এখন ওই কক্ষে যেতে যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে আকিব বলেন, প্রাধ্যক্ষ স্যার আমাকে ডেকে ছিলেন। তিনি আমাকে একটা অপরিত্যক্ত কক্ষে সিট দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি এই সিটেই থাকতে চাই। কারণ গত কয়েকদিনে আমি সিটের মেরামত করেছি। নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি।

আবাসিক শিক্ষার্থীর জিনিসপত্র রুম থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাতুল বলেন, ওই শিক্ষার্থী আমার ছোট ভাইয়ের বেড ফেলে দিয়েছিল। তাই ওর (আকিব) বেড সরিয়ে ওই ছোট ভাইয়ে বেড বিছানো হয়েছে।

তবে বেড ফেলে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আকিব বলেন, এটি সম্পূর্ন মিথ্যা। কোনো বিছানাপত্র ছিল না। আমি বিগত একমাস ধরে এখানে থাকছি।

সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. হবিবুর রহমান বলেন, ওই কক্ষে সিনিয়র যে শিক্ষার্থী ছিলেন, তিনি নিয়ম অনুযায়ী হল ছাড়ার সময় হল প্রশাসনকে জানায়নি। আকিবও ওই বেডে ওঠার সময় জানাননি। তবে আকিব ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। তাকে অন্য একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

জিনিসপত্র বের করে দেওয়ায় ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি বলেন, আমরা হল প্রশাসন বসে বিষয়টি খোঁজ নিবো। এই ঘটনা কিভাবে ঘটল।

জি/আর