ভ্রমণ-ভয়ংকর সুন্দর মার্চিসন ফলস ন্যাশনাল পার্ক

bhromonmarchinsonfallfromtop

পূর্ব আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ উগান্ডা। রাজধানীর নাম কাম্পালা। এই কাম্পালা শহরে আমাকে  তিন বছরের কিছু বেশি সময় থাকতে হয়েছিল। সাতটি ছোটো ছোটো পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা কাম্পালা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর। একদম বিষুবরেখার উপরে অবস্থিত হলেও কাম্পালা আদৌ গরম নয়। আবার ঠান্ডাও নয়। সমুদ্রতল থেকে ১২০০ মিটার উচ্চতার এই শহরে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামে না, আর ২৮ ডিগ্রির উপরে যায় না। মোটামুটি চিরবসন্তের শহর বলা যায়।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ ‘লেক ভিক্টোরিয়া’র একদম পাশেই অবস্থিত কাম্পালাতে বছরভর রাত্রে বৃষ্টি হয় আর দিনের বেলায় ঝকঝকে রোদ। ফলে চারদিকে সবুজের সমারোহ।

সুন্দরবন বললেই যেমন বাঘের কথা মনে আসে, ঠিক তেমনই আফ্রিকা বললেই আমরা ভাবি জঙ্গল, আর জঙ্গল মানেই সিংহ, গন্ডার, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, জলহস্তী, কুমির আরও কত জীবজন্তু। আয়তনে ছোটো হলেও উগান্ডায় রয়েছে অনেকগুলো ন্যাশনাল পার্ক আর রিজার্ভ ফরেস্ট। এর মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটি বনাঞ্চল হচ্ছে মার্চিসন ফলস ন্যাশনাল পার্ক।

অন্য জঙ্গলের তুলনায় মার্চিসন ফলস বেড়াবার অভিজ্ঞতা একটু বেশি দুঃসাহসিক এবং গা ছমছম করা। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন উগান্ডায় ভ্রমণকারীদের দল বেঁধে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কোনও সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থা ছিল না। নিজের গাড়িতে, অথবা ভাড়া করা গাড়ি নিয়েই যেতে হত। ব্যতিক্রম ছিল বিউইন্ডি ইম্পেনিট্রেবল ফরেস্ট, যেখানে পাহাড়ি গোরিলার বাস। সেখানে যেতে হলে ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গেই যেতে হয়।

যা হোক, ভিক্টোরিয়া হ্রদের ধারে পিকনিক করে আর কাছেই জিঞ্জা শহরে নীল নদের উৎস বেড়িয়ে আরও একটু বড়ো সফরের জন্য উসুখুসু করছি, এমন সময় পরিচয় হয়ে গেল ও-দেশের বনবিভাগের ডিরেক্টরের সঙ্গে। আমার বেড়ানোর ইচ্ছে শুনে উনি বললেন মার্চিসন ফলসের কথা এবং ভরসা দিলেন যে একটু ছোটো গাড়িও অনায়াসেই যেতে পারবে জঙ্গলের রাস্তায়। উনি আরও বললেন যে যদি মার্চিসন ফলসে যাই, যেন বনবিভাগের বান্ডা বা কুটিরে অবশ্যই থাকি।

অতএব একদিন কাকভোরে বেরিয়ে পড়া গেল। সঙ্গে প্রচুর খাবার জল, কিছু খাবারদাবার, আর জেরিক্যানে অতিরিক্ত কুড়ি লিটার পেট্রল নিয়ে। ও-পথে মাসিন্ডি ছাড়া কোথাও পেট্রোল পাওয়া যাবে না, তাই এই ঝুঁকিটা নিতেই হল।

শহরের সীমা ছাড়াতেই দু-পাশে ঘন সবুজ ক্ষেতের বুক চিরে চলে গেছে ফিতের মতো রাস্তা। দূরে আবছা দেখা যায় ছোটো ছোটো পাহাড়ের সারি।

আমাদের যেতে হবে উত্তরমুখী কাম্পালা-গুলু সড়ক ধরে কাফু নদীর পুল পর্যন্ত। সেখান থেকে পশ্চিমে বাঁক নিয়ে মাসিন্ডি জেলার প্রধান শহর মাসিন্ডি। তার পরে জঙ্গলের পথে মার্চিসন ফলস। প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের পথ। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের কল্যাণে উগান্ডার হাইওয়েগুলো খুবই সুন্দর, যদিও বেশি চওড়া নয়। পথে গাড়ি খুবই কম। কাজেই রীতিমতো জোরেই গাড়ি ছোটানো গেল। বেশ কিছু গ্রাম দেখলাম পথে, বাচ্চারা বই নিয়ে চলেছে স্কুলে।

ঘণ্টা দুই পরেই পৌঁছে গেলাম কাফু নদীর ব্রিজে। ব্রিজ পার হতেই বাঁদিকে মাসিন্ডি যাবার লাল  মোরামের রাস্তা। দু-পাশে বালির ঢাল, আর তার পরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া বিশাল বিশাল গোরুর র‍্যাঞ্চ। মাসিন্ডির গোরু আর দুধ ও-দেশে প্রসিদ্ধ। জনহীন এবং প্রায় যানবাহন শূন্য পথ। মাঝে মাঝে ঝোপঝাড়ে ভরা মাঠ, বাবুল জাতীয় গাছের জঙ্গল আর কয়েকটা তালগাছ।

সেই সময় উগান্ডার দক্ষিণ অঞ্চলে শান্তি থাকলেও দেশের উত্তরভাগে কিছু সামরিক অভিযান চলছিল একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সেই জনমানবহীন মাসিন্ডি রোড দিয়ে যেতে যেতে সবসময় মনে হচ্ছিল ওই বুঝি বন্দুক হাতে বেরিয়ে এল লর্ডস লিবারেশন আর্মির কোনও দল বা নিদেনপক্ষে কোনও লুঠেরা! এরকম কিছুই অবশ্য ঘটেনি। প্ল্যানমাফিক ঠিক সময়েই পৌঁছে গেলাম মাসিন্ডি। জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার এখান থেকে ৮০ কিলোমিটার।

মাসিন্ডি হোটেলে ব্রেকফাস্ট করার জন্য একঘণ্টার বিরতির পর আবার পথে। আর মোরাম নয়, এবারে পাথরকুচি ও মাটির রাস্তা।

bhromonmarchinsonThe jungle path

দু-দিকের বসতি ধীরে ধীরে কমে গিয়ে শুরু হল পাতলা জঙ্গল, যা মিশে গিয়েছে মার্চিসন ফলসের গভীর জঙ্গলে। কয়েক মাইল গিয়েই দেখি পুরো রাস্তা বন্ধ করে মস্ত লোহার গেট। মার্চিসন ফলসে স্বাগত জানিয়ে বোর্ড ঝুলছে। পাশেই কাঁঠালগাছের ছায়ায় কিছু পরিচ্ছন্ন মাটির ঘর – বনবিভাগের অফিস।

হাস্যমুখ অফিসারের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে ও বন প্রবেশের নির্দিষ্ট দক্ষিণা দিয়ে বনে প্রবেশ। অফিসারটি আমাদের বললেন, যদিও ওই জায়গা থেকে ন্যাশনাল পার্ক শুরু, নীল নদের এ-পাড়ে, মানে আমরা যেদিকে আছি সেদিকে কোনও বড়ো জন্তুজানোয়ার নেই। সেসে (Tsetse) মাছি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে দিলেন। বেশ একটা আঁকাবাঁকা বন্য রাস্তায় গাড়ি চলল। এবার লক্ষ্য বনবিভাগের ‘নাইল ক্যাম্প’।

পথে গাড়ির গতি নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে ৩০ কিলোমিটারে। রাস্তা মাটির, কিন্তু বেশ ভালো। পথ যেন আর শেষ হয় না, চলেছি তো চলেছি। একবার অনেক নীচে নেমে যাচ্ছে, আবার উপরে উঠছে।  ফরেস্ট অফিসারের নির্দেশমতো গাড়ি উপত্যকায় নামলেই জানালা বন্ধ করে দিচ্ছি সেসে মাছির ভয়ে। কামড়ালে ‘ঘুম পাওয়া রোগ’ হওয়ার সম্ভাবনা।

চলেছি তো চলেছিই। যদিও একটাই রাস্তা গেছে সোজা নীল নদ পর্যন্ত, কাজেই পথ হারাবার প্রশ্ন নেই। আর হারালেই-বা কী, সাহায্য করার মতো জনপ্রাণী তো নেই! পথে জীবজন্তুর মধ্যে দেখলাম বেশ কিছু বেবুন, দাড়িওয়ালা একধরনের বাঁদর এবং অজস্র হরিণ। মাঝে-মাঝেই ইম্পালা হরিণের দল পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। ঘণ্টা খানেক এইভাবে যাওয়ার পর দেখা মিলল কয়েকটা জিপের, আর তার পরেই পৌঁছে গেলাম আমাদের অস্থায়ী ঠিকানা বনবিভাগের ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে। কাম্পালা ছেড়েছিলাম ভোর ছ’টায়, আর এখন বাজে ঠিক বারোটা।

bhromonmarchinsoncottage

কমপ্লেক্সটা দেখেই আমাদের খুব পছন্দ হয়ে গেল। নামে বান্ডা হলেও কুটিরগুলোর ভিতরের ব্যবস্থা যথেষ্ট আরামদায়ক। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিছানা ও টয়লেট, জাল দেওয়া বড়ো বড়ো জানালা। আমাদের বান্ডায় ছিল তিনটে ঘর। এরকম পাঁচ-ছ’টা কুটির ছড়িয়ে আছে বেশ বড়ো একটা পরিসরে। ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটা রেস্তোরাঁ যেখানে সবরকম পানীয় ও মোটামুটি খাবারদাবার মেলে। কোনও বেড়া বা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা নয় জায়গাটা, যদিও চারদিকে ঘন জঙ্গল। কয়েকজন পর্যটক রয়েছেন দেখলাম, সঙ্গে বাচ্চারাও।

লাঞ্চ করে নিয়ে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম বনবিভাগের বুকিং অফিসে, লঞ্চ বুক করার জন্য। বেলা দুটোয় লঞ্চ ছাড়ল ১৭ কিলোমিটার দূরের মার্চিসন ফলসের দিকে। আরও দুজন বিদেশি আমাদের সঙ্গী। এঁদের সঙ্গে আলাপ জমতে দেরি হল না। রোডেশিয়ার মানুষ এই দুই ভাইয়ের ভ্রমণের নেশা। পায়ে হেঁটে, ট্রেনে, কখনও ট্রাকে বা চলতি কোনও গাড়িতে লিফট নিয়ে এরা চষে ফেলেছে বিশ্বের নানা দেশ। বেশ মজার, ভবঘুরে জীবন এদের।

আমাদের গাইড ফ্রেড্রিকের হাতে বাইনোকুলার, আমার গলায় ক্যামেরা। লঞ্চ চলল জলপ্রপাতের দিকে, ধীরগতিতে। কারণ প্রপাতটাই শুধু নয়, আরও অনেক কিছু দেখার আছে এই পথে। হঠাৎ চোখে পড়ল একদল জলহস্তী। দেখেই ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও সবিস্ময় আনন্দ উচ্ছ্বাস। অগুনতি হিপো দেখলাম কয়েক মিনিটের মধ্যে।

bhromonmarchinsonhippo

জলের মধ্যে এগিয়ে আসা একটা ব-দ্বীপের মতো জায়গায় আমাদের লঞ্চের চালক ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল। গাইড বলে উঠল, “এলিফ্যান্ট।” সামনেই দেখি একটা বেশ বড়ো হাতির পাল, ছানাপোনা সমেত। দলপতি একদন্তিটা তার বড়ো বড়ো কান খাড়া করে আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছিল।

bhromonmarchinsonelephantsguardedbymonsters

ক্রমে তীরের জঙ্গল দূরে সরে গেল। এখন পাথুরে পাড়, কোথাও একটু ঝোপঝাড়। গাইডের কথামতো আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সেইদিকে। দেখি কাঠের গুঁড়ির মতো চুপ করে পড়ে আছে মস্ত কুমির।

bhromonmarchinsonalligator

অজস্র বিশালকায় জলহস্তীর দল নীলের জলে গা ডুবিয়ে বসে আছে; কেউ-বা ক্লান্তিতে হাই তুলছে।  আরও দেখা হল অজস্র পাখি এবং দুটো ফিশিং ঈগল।

bhromonmarchinsonBirds and hippos

পশুপাখি দেখতে দেখতে আমরা খেয়াল করিনি কখন যে জলের চেহারা বদলে গেছে, অনেক বেড়ে গেছে স্রোত। এখন দেখি প্রবল স্রোত ঠেলে আমাদের লঞ্চ চলেছে। জল ভরে গেছে অজস্র ফেনায়। বাঁক ঘুরতেই নজরে এল জলপ্রপাত। জলের মধ্যে জেগে ওঠা কতকগুলো বড়ো বড়ো পাথরের গায়ে লাগল আমাদের লঞ্চ। ফলস এখান থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে, কিন্তু লঞ্চ আর যাবে না। এখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম কী দারুণ বেগে প্রায় ১৫০ ফুট উপর থেকে এক সংকীর্ণ গিরিখাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নীল নদ।

bhromonmarchinsonfromboat

ফিরে এসে একটু পরেই গেলাম ওপর থেকে মার্চিসন ফলস দেখতে। পাহাড়ি পথে গাড়িতে বেশ কিছুটা উপরে উঠে একটা টিলার উপর থেকে দেখলাম জলপ্রপাতের আরেক অপূর্ব রূপ। ভীষণ আওয়াজ, দু-পাশের নিবিড় বনানী, নীলের জলে আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘের ছায়া—সবমিলিয়ে এক অপূর্ব অনুভূতি।

ফেরার পথে গাড়ি থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে দেখা মিলল এক বিশাল বাইসনের। তার কটমট করে তাকানো দেখে আমরা আর দাঁড়ালাম না।

bhromonmarchinsonbison

ক্যাম্পের রেস্তোরাঁয় বসে চা খেতে খেতে দেখি এক পরিবার তাদের বান্ডার সামনে ছোট্ট একটা তাঁবু খাটিয়ে ফেলেছে। বাচ্চারা ওর মধ্যে রাত কাটাবে। ওই বয়স থেকেই বাবা-মা এদের উৎসাহ দেয় এইধরনের সাহসিকতার কাজে। বড়ো হয়ে এরাই বেরিয়ে পড়বে সারা পৃথিবী ঘুরতে। আমরা চায়ে চুমুক দিচ্ছি, ওদিকে নীল নদের জলে নাইতে নেমেছে বিশালকায় এক দাঁতাল হাতি।

জেনারেটরের দৌলতে ক্যাম্পে মিটমিটে আলো জ্বললেও চারদিকের ঘন জঙ্গল অন্ধকার হতেই যেন আমাদের ঘিরে ধরল। রাতের খাওয়া সেরে হাতে টর্চ নিয়ে একবার নদীর ধারে গেলাম। বাতিবিহীন বহু গ্রামে আমি রাত কাটিয়েছি, কিন্তু অন্ধকারের ওরকম জমাট রূপ কখনও দেখিনি। প্রতি পদক্ষেপে মনে হচ্ছিল এই বুঝি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল একটা হায়না বা হিপো।

নদীর ধারে সেই অন্ধকারের মধ্যে জেটি পাহারা দিচ্ছে এক বন্দুকধারী জওয়ান। তার কাছে জানা গেল একজোড়া হিপো নাকি আমাদের ক্যাম্পের দিকেই গেছে একটু আগে। শুনে তো আমরা পড়ি কি মরি করে ফিরে এলাম। রাত দশটায় আলো নিভে গেল। আকাশে মেঘ জমেছে, বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে। পরের দিন ভোরে আমাদের নীলের ও-পাড়ের সাফারি হবে কি না ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মাঝরাতে কচরমচর আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। আর সবাই ঘুমোচ্ছে। আমি পর্দা সরিয়ে কাচের সার্শির মধ্য দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেই আওয়াজ আর কোনও ভারী জানোয়ারের চলাফেরার অনুভূতি ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না। পরে শুনেছিলাম রাতে কমপ্লেক্সের আশেপাশে জলহস্তীরা ডিনার করতে আসে।

অপূর্ব এক ভোরে ঘুম ভাঙল। নীল আকাশে মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। ফ্লাস্কে চা, খাবার আর জল নিয়ে ঠিক সাতটার সময় পৌঁছে গেলাম জেটির কাছে। আমাদের সঙ্গে যাবে সশস্ত্র ফরেস্ট রেঞ্জার ডেভিড। গলায় বাইনোকুলার। যথাসময়ে গাড়ি সমেত ফেরি পার হয়ে ডেভিডের নির্দেশমতো গাড়ি চালালাম। লক্ষ্য পাকোয়াচ এয়ারফিল্ড। আসার আগে বন অফিসের ব্ল্যাকবোর্ডে দেখেছি গতকাল কয়েকটি সিংহ ওই অঞ্চলে ছিল। ডেভিড বলল আমরা যেন আশেপাশের গাছের ডালের উপর নজর রাখি, লেপার্ডের দেখা মিলতে পারে। ও বসেছে আমার পাশেই, জানালা দিয়ে আধখানা শরীর বার করে, চোখে বাইনোকুলার লাগিয়ে।

অনেক ঘোরাঘুরি করেও আমাদের সিংহ দেখাতে না পারায় মরিয়া হয়ে ডেভিড গাড়ি ঢোকাতে বলল সাভানা ঘাসের জঙ্গলে। ঢুকে দেখি ভিতরটা এক অপূর্ব মাঠ, আর অল্প দূরেই ঘাস খাচ্ছে পালে পালে হরিণ। এখানে আমরা আমাদের প্রাতঃরাশ সারলাম গাড়িতে বসেই। তার ফাঁকে ডেভিডের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল হরিণদের গতিবিধির উপর। ওদের মধ্যে কোনও চঞ্চলতা দেখলেই বুঝতে হবে আশেপাশে পশুরাজ কিংবা লেপার্ডের থাকার সম্ভাবনা।

কিন্তু না, সারাদিন ঘুরেও আমরা কোনও লেপার্ড বা সিংহের লেজও দেখতে পাইনি ডেভিডের অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও। সিংহ আমরা দেখেছিলাম পরে, কুইন এলিজাবেথ ন্যাশনাল পার্কে। সে গল্প অন্য সময় বলার ইছে রইল। এ যাত্রায় আমরা দেখলাম অনেক জিরাফ, বাইসনের দল, প্রচুর হাতি এবং বেশ খানিকটা দূর থেকে দুটো হায়েনা।

bhromonmarchinsongiraffe

এ যাত্রায় সিংহ না দেখতে পাওয়ায় আমাদের কোনও খেদ ছিল না। আমাদের এই প্রথম আফ্রিকান সাফারি। তাও আবার নিজে ড্রাইভ করে, যার মজাই আলাদা। তাছাড়া এইরকম শ্বাপদসংকুল বনের মধ্যে আফ্রিকান বান্ডায় থাকা আর প্রকৃতিকে এভাবে কাছে পাওয়ার এই অভিজ্ঞতা আমাদের স্মৃতিতে আজও অম্লান।- সূত্র: joydhakweb.in