ভ্যাকসিন পেতে প্রস্তুতি বাংলাদেশেও

ভ্যাকসিনকেই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল থামানোর একমাত্র উপায় ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো বিনা মূল্যে পাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তাই চলতি অর্থবছরের বাজেটে করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য যে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার বড় একটি অংশ ভ্যাকসিন কেনা বাবদ খরচ করা হতে পারে। সরকার প্রাথমিকভাবে এ প্রস্তুতিই নিচ্ছে। এ ছাড়া কোনো কারণে যদি দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায় এবং তার জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে তাহলেও বিশেষ বরাদ্দ থেকে অর্থ ব্যবহার করা হবে। আর যদি এসব কিছুই না লাগে তাহলে আইসিইউ স্থাপন, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেনসহ মুমূর্ষু রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে এ খাতের অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, করোনা মোকাবেলার জন্যই বিশেষ এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদি ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে পাওয়া না যায় তাহলে এ খাত থেকে অর্থ ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া যদি এমন কোনো বরাদ্দের প্রয়োজন হয়, যেটা স্বাস্থ্য খাতের থোক বরাদ্দ ছাপিয়ে যাবে, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে এ বরাদ্দ থেকে অর্থ ব্যয় করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং সাবেক পরিচালক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, সরকার কোন খাতে এ বিশেষ বরাদ্দ ব্যয় করবে তা স্পষ্ট করেনি। তবে যদি তা ভ্যাকসিন বা এসংশ্লিষ্ট কোনো কাজে ব্যবহার করে তাহলে সেটি ভালো উদ্যোগ। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কেউ যেন এ টাকা মেরে খেতে না পারে এবং দুর্নীতি না হয়। আরেক সাহেদ কিংবা সাবরিনা যেন এ অর্থের সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।

সূত্র মতে, বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার এই বিশেষ বরাদ্দ খরচের ক্ষেত্রে সরকার বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা করেছে। সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিন কেনাকে। তার পরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজন মোতাবেক অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি এবং বিদ্যমান হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর এবং অক্সিজেনের মতো জিনিস কেনা।

বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে বিজ্ঞানীদের দিকে। সবার একটাই জিজ্ঞাসা, কবে আসবে ভ্যাকসিন? বর্তমানে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে। ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী মাসের মধ্যেই তাঁরা বাজারে ভ্যাকসিন আনতে পারবেন। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশের একটি কম্পানি ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এ ব্যাপারে কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে আশা করা হচ্ছে, অক্টোবর নাগাদ কোনো ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক ব্যবহারের অনুমতি পেয়েও যেতে পারে।

বাংলাদেশের ‘গ্লোব’ ভ্যাকসিন আবিষ্কারে দেরি হলে এবং এর মধ্যে অন্য কোনো দেশ আবিষ্কার করলে সরকার সেদিকে পা বাড়াতে পারে। কারণ ফিয়ার্সফার্মার তথ্য অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন যদি ৭০ শতাংশ জনগণকে দেওয়া যায়, তাহলে নির্মূল হতে পারে করোনাভাইরাস। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে সরকার।

সেপ্টেম্বর, অক্টোবর নাগাদ ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে কি না সে বিষয়ে আবিষ্কারের দৌড়ে থাকা কোনো দেশই ঘোষণা দেয়নি। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বিনা মূল্যে মিলবে না ভ্যাকসিন। আগ্রহী দেশগুলোকে ভ্যাকসিন কিনে তা জনগণকে দিতে হবে। করোনা মোকাবেলায় সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ থোক বরাদ্দ রাখায় ভ্যাকসিন কিনতে অর্থের সংস্থান নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ