ভাড়া বাস সম্বল রাজশাহী কলেজের: নিজস্ব একটি, ভাড়ায় ১৩টি বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর একটি অন্যতম বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী কলেজ। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী অঞ্চেলের একটি সনামধন্য হিসেবে খ্যাত। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে-মেয়ে মিলে ২৩ হাজার ৭২০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। হোস্টেল ও আশে-পাশে মেস বাদ দিলে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১৪টি বাসÑ যা চাহিদার তুলনায় অনেক অংশে কম।

কলেজের ছেলে হোস্টেলে ৫৫০ জন ও মেয়ে হোস্টেলে ৮২০ জনের আবাসন সুবিধা রয়েছে। আশে-পাশের এলাকায় বিভিন্ন ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করে বাকি শিক্ষার্থীর। এরমধ্যে আর কলেজের পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। তারা প্রতিদিন এই বাসে করে কলেজে আসা যাওয়া করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবকিছু ভালো থাকলেও পরিবহন ব্যবস্থা কিছুটা হলেও বেহাল দশায়।

জানা গেছে, কলেজটির ১৪টি বাসের মধ্যে একটি কলেজের নিজস্ব বাস। আর ১৩টি কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়ায় চালায়। এই ১৩টি বাসের ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিতে হচ্ছে। প্রতিটি বাসের জন্য বছরে সাত লাখ টাকা দিতে হয়। তার পরেও শিক্ষার্থীদের আশা-যাওয়া নিয়ে দুর্ভোগের অভিযোগ আছে। একটি বাসে ৫২ জন শিক্ষার্থী কলেজে আসা যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ২০ থেকে ২৫জন বেশি শিক্ষার্থী বাসে আসা যাওয়া করে। এর ফলে এক প্রকার গাদা-গাদি অবস্থার সৃষ্টি হয়। আবার একই বাসে ছেলে-মেয়ে যাওয়া আশা তো জন্ম থেকেই আছে।

কলেজের ১৪ টি বাস ৫টি রুটে চলাচল করে। এর মধ্যে তালাইমারী, কাজলা, বিনোদপুর, চৌদ্দপাই, কাটাখালীর হরিয়ান, বেলপুর ও বানেশ্বর রুটে। অন্যদিকে শালবাগান এলাকা হয়ে নওদাপাড়া ও কোর্ট কাশিয়াডাঙ্গা রুটে চলাচল করে।
রাজশাহী কলেজের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে বাস আছে তাতে কনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তাদের কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর কলেজের আশে-পাশে থাকেন তাই এটা সমস্যা হয় না।

কিছু বাইরের শিক্ষার্থী বাসে ওঠার জন্য চাপটা বেশি হয়। আগামীতে এই চাপ আর থাকবে না। কারণ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করেছে স্মার্ট কার্ড। কলেজের পাঁচটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হয়েছে। স্মার্ট কার্ডটি বাসে, ক্লাসে উপস্থিতি, ডাইনিং, বেতনের জন্য কাজে লাগবে।

এবিষয়ে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, কলেজের নিজস্ব মাত্র একটি বাস। আর বাকিগুলো ভাড়ায় চলে। প্রতিটি বাসে ট্রিপ হিসেবে ভাড়া নেয়া আছে। যে বাস যতটা ভাড়ায় যায় তারা সে হিসেবে ভাড়া পাই। আর না গেলে ভাড়া নাই।

রাজশাহী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, কলেজে অনেক শিক্ষার্থী। কিন্তু শিক্ষার্থীর তুলানায় বাস নেই বললেই চলে। বরাদ্দকৃত বাসগুলোতে ছেলে- মেয়েদের গাদাগাদি করে উঠতে হয়। এক কথায় ভোগান্তির শেষ নেই।

এছাড়া আরো অনেক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বাস নিয়ে অনেক সমস্যা হয়। হরিয়ান রুটের বাস শুধু মাত্র কাটাখালী, চৌদ্দপাই ও কাজলার শিক্ষার্থীদের নেয়া হয়। কিন্তু কলেজে আসার পথে হরিয়ান ও কাটাখালী থেকে প্রায় ভর্তি হয়ে আসে বাসটি। আর চৌদ্দপাই ও কাজলা থেকে আরো ২৫ থেকে ৩০জন শিক্ষার্থী ওঠে। তাহলে এতো শিক্ষার্থী কীভাবে যায়? অনেক শিক্ষার্থীরা দারিদ্র হলেও তারা বাসে যেতে পারে না। অনেক সময় তাদের অটোরিকশায় যেতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বাসে সিটের চেয়ে শিক্ষার্থী বেশি। তার পরে আবার একটি বাসের মধ্যে ছেলে-মেয়ে এক সঙ্গে ওঠানামা করতে হয়। সকালের দিকে তো দাঁড়িয়েও জায়গা পাওয়া যায় না। তাই অটোরিকশাায় যাওয়া-আসা করতে হয়। ক্লাস শেষে গাড়িতে আধা ঘণ্টা বা ২০ মিনিট আগে বসে থাকি। তা না হলে বাসে জায়গা পাওয়া যায় না। সেদিন আবার অটোরিকশায় যেতে হয়। মনে হয়ে এই লাইনে (রুটে) আর একটি বাসে হলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের বাসের সদস্য নিয়ে ড্রাইভার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হয়নি। তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতেও রাজি না তারা।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান বলেন, বাসের সমস্যা আগে ছিল। বর্তমানে তেমন নেই। সকালে বাস ফাঁকা আসে। ভিড় হয় সকাল সাড়ে ৯টা ও দুপুর দেড়টার বাসে। সে সময় যাদের ক্লাস নেই তারাও আসে। তাছাড়া অন্য সময় বাসগুলো ফাঁকা যায়।

বাস বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে সাড়ে চার’শ টাকা নেয়া হয়। বাস বাড়ালে আরো ৫০ থেকে ৭৫ টাকা বেশি নিতে হবে। তাই বাস বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় আছে। কিছু দিনের মধ্যে বানেশ্বর রুটে একটি বাস বাড়ানো হবে।

 

স/আ