ভারত-চীনের ১৫০ মিনিটের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হল

অবশেষে শান্তি ফিরছে লাদাখে। গত কয়েক মাস ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনে বৃহস্পতিবার ‘পাঁচ পরিকল্পনায়’ সম্মত হয়েছে দুই বৈরী রাষ্ট্র ভারত-চীন। রাশিয়ার মস্কোয় চলমান সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে এদিন দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই সম্মতিতে পৌঁছান।

শুক্রবার ভোরে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে: দুই মন্ত্রীর ‘খোলামেলা এবং গঠনমূলক’ আলোচনায় পাঁচটি পরিকল্পনায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দু-দফার ১৫০ মিনিটের বৈঠকে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা সরাতে রাজি হয়নি কোনো পক্ষই।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাঁচটি বিষয়ে একমত হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সীমান্তের সম্মুখসারির সেনা ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সব চুক্তি ও প্রোটোকল মেনে চলা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পরিস্থিতি উত্তেজক করে তুলতে পারে-এমন সব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা। এ ছাড়া উভয় দেশই চীন-ভারত সীমান্ত প্রশ্নে বিশেষ দূত মারফত আলোচনা ও যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও একমত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়: ‘দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হয়েছেন যে, সীমান্ত এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি কোনো পক্ষের স্বার্থের অনুকূল নয়। সে কারণে তারা একমত হয়েছেন যে, উভয় পক্ষের সীমান্ত বাহিনীর উচিত তাদের আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, দ্রুত সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া, যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখা এবং উত্তেজনা নিরসন করা।’

মে মাস থেকেই লাদাখ সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী। ব্যর্থ হয় দফায় দফায় সেনা পর্যায়ের বৈঠকও। এর মধ্যেই ১৫ জুন রড-বর্শা নিয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশ। ৪৫ বছরের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রথম গোলগুলি। তারপরই শুরু হয় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। প্রথমে বসেন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এর পরই বসলেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রথম দফা সহিংসতার পর রাশিয়ার হস্তক্ষেপেই প্রতিবেশী দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোনে কথা বলেন। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি ভালো হওয়ার চেয়ে আরও জটিল হয়ে যায়। পরে এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে বৈঠকের উদ্যোগ নেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন গালওয়ানের প্যাট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-য় সংঘর্ষের পর কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন ওয়াংয়ের সঙ্গে। এর পরে গালওয়ানের পাশাপাশি প্যাট্রোলিং পয়েন্ট-১৫ (হট স্প্রিং) এবং প্যাট্রোলিং পয়েন্ট-১৭ (গোগরা) থেকে কিছুটা পেছনে সরেছিল চীনা ফৌজ। উত্তেজনা কমাতে তৈরি হয়েছিল ‘বাফার জোন’। কিন্তু আপাতত প্যাংগং এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই অনুমান নয়াদিল্লির।

 

সূত্রঃ যুগান্তর