ভারতের ৫ রাজ্যের ভোট শুরু হলো উত্তর প্রদেশ দিয়ে

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গোরক্ষা নীতির কড়াকড়ির কারণে বেশ বিপাকে আছেন উত্তর প্রদেশের বাসিন্দারা। এখানেই গত বছর চার কৃষককে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। দলিত নারীকে গণধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও এখানে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। সেই উত্তর প্রদেশে আজ থেকে শুরু হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।

চলতি মাসে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট হচ্ছে। উত্তর প্রদেশের পাশাপাশি পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ড, গোয়া ও মনিপুরে ভোট নেওয়া হবে। উত্তর প্রদেশে আজকের ভোটের পর আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ৩ মার্চ ও ৭ মার্চ ভোট নেওয়া হবে। এ রাজ্যে প্রথম দফায় ১১টি জেলার ৫৮টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। এছাড়া পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ও গোয়ায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং মনিপুরে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মার্চ ভোট নেওয়া হবে। এসব রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল একযোগে আগামী ১০ মার্চ প্রকাশ করা হবে।

ভারতে করোনাভাইরসের ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ রুখতে নির্বাচনকেন্দ্রিক মিছিল-সমাবেশ আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন কমিশনের এমন নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট নেতাদের প্রচার আটকে নেই। পাঁচ রাজ্যেই ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনী দলের নেতারা।

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গত মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশে নির্বাচনী সমাবেশ করেন। করোনাবিধির তোয়াক্কা না করে সেখানে জড়ো হন তাঁর সমর্থকরা। করোনাবিধি ভাঙার অভিযোগে প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে সেদিনই নালিশ করে তৃণমূল। অথচ এর আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজেও উত্তর প্রদেশে সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাবে এক জনসভায় সশীরে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

পুরোহিত থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিক বনে যাওয়া যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য গতকাল ভার্চুয়াল সমাবেশ করেন। সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে উত্তর প্রদেশের এই বিজেপি নেতা বলেন, ‘নারীদের আর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না। এটা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের যুবসমাজকে কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এ বছর আমরা যুবসমাজকে এক কোটি ট্যাব ও স্মার্টফোন দিতে যাচ্ছি। ’

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এসব অঙ্গীকার ভোটারদের ঠিক কতটা প্রভাবিত করতে পারবে, সেটা দেখতে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা অবশ্য ধারণা করছে, ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি যেভাবে রাজ্যের পশ্চিমের জাঠ কৃষকদের ভোট পেয়েছিল, এবার সেটা নাও হতে পারে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ দেখছেন বিশ্লেষকরা।

মোদি সরকারের বিতর্কিত তিন কৃষি আইন ভারতের গোটা কৃষক সমাজকে খেপিয়ে তুলেছিল। দাবি আদায়ে দীর্ঘ সময় ধরে তারা অবস্থান ধর্মঘট করে। কৃষকদের অনড় অবস্থানের মুখে শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত কৃষি আইনগুলো বাতিলের ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু ততদিনে বেশ কয়েকজন কৃষককে আন্দোলনে নানা ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয়েছে।

এছাড়া সরকারের সঙ্গে কৃষকদের হওয়া সমঝোতা বাস্তবায়নে বর্তমানে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ করছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন ফসলের যে ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। আর সেসব ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণেও সরকারের গাফিলতির অভিযোগ করছেন কৃষকরা।

এর মধ্যেই উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরিতে এক বিজেপি নেতার ছেলের গাড়িচাপায় চার কৃষকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তা নিয়েও রাজ্য উত্তপ্ত ছিল বেশ কিছুদিন।

এমন নানা ইস্যুতে উত্তেজনা হ্রাস বৃদ্ধির মধ্যে আজ থেকে শুরু হয়েছে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ