ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা নেই মেঘনা-তেঁতুলিয়ায়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও ইলিশের দেখা নেই ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে। দিনরাত নদীর এপার-ওপার জাল ফেলেও মিলছে না ইলিশ। তবুও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রতিদিন দল বেঁধে নদীতে নামছেন জেলেরা। স্বপ্ন তাদের একটাই জালে ইলিশ ধরার পরবে। সেই ইলিশ বিক্রি করে মহাজনের দাদন, পাওনাদার ও এনজিওর ঋণের টাকা শোধ করবেন।

কিন্তু জেলেদের সেই স্বপ্ন এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে, দেখা নেই রূপালী ইলিশের। জেলে পল্লীগুলোতে দেখা দিয়েছে হাহাকার। অনেক পরিবারে তিন বেলা তো দূরের কথা, দুই বেলা দু’ মুঠো খাবারও জুটছে না।

ভোলার বিভিন্ন জেলেপল্লী ঘুরে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতি বছর এ সময় নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পরে। সেই ইলিশ বিক্রি করে তারা মহাজন, পাওনাদার ও এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে শুরু করেন। কিন্তু এ বছর বর্ষা ও ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও এখনও নদীতে ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না তারা।

ভোলা সদরের রাজাপুরের জেলে মো. হাসেম আলী জানান, এ বছর ভরা মৌসুমে ইলিশা ধরার জন্য এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ধার করে নতুন একটি ট্রলার ও জাল কিনেছেন। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে নতুন ট্রলার ও জাল দিয়ে নদীতে নেমে কোনো ইলিশ পাচ্ছেন না। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে ফিরছেন ২/৩টি ইলিশ নিয়ে। এতে ইঞ্জিনের তেলের টাকাও উঠছে না।

ভোলা সদরের ভোলার খাল এলাকার জেলে বাদশা মিয়া জানান, এ বছর রোজার আগ থেকে নদীতে মাছ না থাকায় পাওনাদারের ভয়ে বাড়ি থেকে ঢাকা পালিয়ে গেছেন। সেখানে অন্য কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালিয়েছেন। এখন ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ায় বাড়িতে এসেছেন। গত ১ সপ্তাহে নদীতে জাল ফেলে প্রতিদিন মাত্র ৩/৪টি ইলিশ পেয়েছেন। এতে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ বা সংসার চালানো তো দূরের কথা ট্রলারের তেলের খরচও উঠছে না। তাই আর কয়েকদিন দেখে আবার ঢাকা গিয়ে অন্য কাজ করবেন।

ইলিশা জংশন এলাকার জেলে লিয়াকত আলী জানান, ইতোমধ্যে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও সারা দিনে জালে ২-৪ টা ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে তেলের টাকাও ওঠে না। চার ছেলেসহ তিনি প্রতিদিন নদীতে গিয়ে তেলের টাকাও ওঠাতে পারছেন না। ফলে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। গত তিনদিন ঘরে চাল না থাকায় অন্য বাড়ি থেকে ধার করেছেন। তিন বেলার বদলে ১/২ বেলা খেয়েছেন। ঘরে স্ত্রী সন্তান, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিদের মুখের দিকে তাকাতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে টাকা ধার করে ৩ ছেলেকে সোমবার রাতের লঞ্চে ঢাকায় অন্য কাজ করার জন্য পাঠিয়েছেন।

এছাড়াও মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ মাছ ধরা না পরায় জেলার প্রতিটি মৎস্য ঘাটে আড়াৎদাররা অলস সময় পার করছেন।

ইলিশা জংশন মৎস্য ঘাটের আড়াৎদার মো. ফারুক মিয়া জানান, নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলেরা যেমন অভাবে রয়েছে, তেমনি তারাও চরম হতাশায় রয়েছেন। জেলেদের কাছে দাদনের অনেক টাকা পড়ে আছে। নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেরা নতুন করে আরও টাকা ধার নেয়ার জন্য প্রতিদিন ছুটে আসছেন, কিন্তু দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাছ না থাকায় কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

এদিকে ভোলার সাত উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জেলে থাকলেও মাত্র ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬০ জনকে সরকারি নিবন্ধনভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম (৫১ হাজার ২৫০ জন) জেলে সরকারি চাল বরাদ্দ পাচ্ছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, বর্তমানে নদীতে ইলিশের পরিমাণ খুবই কম। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ইলিশের উপস্থিতিও বাড়বে। আগস্টের মাঝামাঝি সময় নদীতে ইলিশের পুরো ভরা মৌসুম শুরু হবে। তখন নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে।

তিনি আরও জানান, খুব দ্রুত নতুন করে আরও জেলেদের নিবন্ধন করা হবে। সব জেলেরা যাতে সরকারি চাল পায় সে জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।