ব্রেক্সিট নাকি গণভোট, কোন পথে ব্রিটেন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ব্রেক্সিট নাকি আরেকটি গণভোট- যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বৃহস্পতিবার ব্যালট পেপারে ভোট দিয়েছেন ব্রিটিশরা। কোন পথে যাবে ব্রিটেন, দেশটির কুরসিতে কে বসছেন- আজই তার ফলাফল মিলবে।

আর এর ওপরই নির্ভর করছে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের ভিত। বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) নাকি ইউরোপের সঙ্গে গাঁটছড়া আরও শক্ত হচ্ছে- তা জানা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী দেশটিতে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সাধারণ নির্বাচন হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরের কম সময়ে দেশটিতে এটি তৃতীয় নির্বাচন। ১০০ বছরের ইতিহাসে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। খবর বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানের।

বৃহস্পতিবার গ্রিনেজ মান সময় ৭টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৬৫০টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। রাত ১০টা (বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা) পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পরই শুরু হবে গণনা।

শুক্রবার ফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ কনজারভেটিভ পার্টির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। বরিসের নেতৃত্বে ব্রেক্সিট নাকি করবিনের নেতৃত্বে আরেকটি গণভোট- এ দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে ভোট দিয়েছেন ব্রিটিশরা।

ব্রিটেনজুড়ে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক নাগরিক ভোট দেয়ার যোগ্য। দেশটিতে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ। এ নির্বাচনকে ‘তরুণ প্রজন্মের অতিগুরুত্বপূর্ণ ভোট’ বলে আখ্যা দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

কোন কোন গণমাধ্যম একে ‘ব্রেক্সিট ভোট’ও আখ্যা দিয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। সংবিধান অনুসারে, কোনো দলকে সরকার গঠনের জন্য নিম্নকক্ষের ন্যূনতম ৩২৬ আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার বনাম পার্লামেন্টের মুখোমুখি অবস্থানে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছরে ব্রেক্সিট কার্যকর করা যায়নি। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর আলোচিত এ বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে তা পিছিয়ে যায়। নতুন দিনক্ষণ ধার্য হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি। ব্রেক্সিট নিয়ে এমন অচলাবস্থার অবসানে অবশেষে আগাম নির্বাচনের পথ বেছে নিয়েছে যুক্তরাজ্য। এ ভোট ২০২২ সালে হওয়ার কথা ছিল। ব্রেক্সিট জট কাটাতে প্রায় শত বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ডিসেম্বরে ভোটের আয়োজন করতে হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রী বরিসকে। এর আগে ১৯২৩ সালে ডিসেম্বর মাসে ভোট হয়েছিল।

পার্লামেন্টে তিনবার ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ হয়ে তেরেসা মের পদত্যাগের পর ক্ষমতায় আসা বরিসকেও কম গলদঘর্ম হতে হয়নি। বরিসের ভাষায়, যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ এবং অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলার মাধ্যমে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের পথ দেখাবে এ নির্বাচন।

জয়লাভ করলে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ইইউ থেকে বের করে নিয়ে আসবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বরিস। পাশাপাশি ক্ষমতায় টিকে যেতে পারলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পুলিশের মানোন্নয়নে আরও বেশি অর্থ ব্যয়ের আশাও দেখিয়েছেন।

তার প্রধান প্রতিপক্ষ করবিন ক্ষমতায় এলে ছয় মাসের মধ্যে নমনীয় একটি ব্রেক্সিট চুক্তি করতে গণভোটে দেয়া ছাড়াও নাগরিকদের জন্য আরও বেশি ব্যয়, প্রধান প্রধান সেবা জাতীয়করণ, ধনীদের ওপর আরও করারোপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঠে নামেন।

নির্বাচনে দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। ‘ব্রেক্সিট সম্পন্ন কর’ (গ্রেট ব্রেক্সিট ডান) স্লোগানে এই নির্বাচনে অংশ নেয়া বরিসের জয়ের ব্যাপারে আভাস মিলেছে বেশ কয়েকটি মতামত জরিপে। বুধবার ভোট জরিপকারী সংস্থার পূর্বাভাসে দেখা গেছে, বরিসের কনজারভেটিভ পার্টির জনসমর্থন গতবারের চেয়ে কিছুটা কমলেও এখনও লেবার পার্টির চেয়ে এগিয়ে।

বিজয়ী দলের প্রতিনিধিরা বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে নতুন সরকার গঠনে অনুমতি চাইবেন। দলের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনে প্রবেশের আগেই নতুন সরকারের পরিকল্পনা জানাবেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ৫৮তম পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচন এবং নতুন এমপিদের শপথ দেয়া হবে।