ব্রিটিশ বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের দরজা খোলা

সিল্কসিটিনউজ ডেস্কঃ

 

বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে যেসব ব্যবসায়ী সহযোগিতা করতে চান তাদের জন্য বাংলাদেশের দরজা সব সময় খোলা। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন একথা জানিয়েছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়েও কথা বলেন। দুদেশের বন্ধুত্ব সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ব্রেক্সিটের পরও ইউরোপে বাংলাদেশের ‘শুল্কমুক্ত’ ও ‘কোটামুক্ত’ সুবিধা বহাল থাকবে।’

 

সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশি দূতাবাসের দায়িত্ব নেওয়া হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন বলেন, ‘ব্রেক্সিটের পক্ষে গণভোটের পর ব্রিটেনে বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কি ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা তো রয়েছেই। তবে আমরা পরিস্থিতি উন্নয়নে যে কোনও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য চলমান সম্পর্ক বহাল রাখা এবং এখনকার মতো সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্য যাতে করে যুক্তরাজ্যের বাজারে কোনও শুল্ক ও কোটা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।’

 

হাইকমিশনার গত মাসে বাংলাদেশের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত এমপি রুশনারা আলীর ঢাকা সফরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। দু-দেশের মধ্যে ঢাকা-পায়রা পর্যন্ত ২৪০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

 

নাজমুল বলেন, ‘আমরা আশা করি এ ধরনের বড় বড় প্রকল্পে আরও ব্রিটিশ কোম্পানি এগিয়ে আসবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী। কারণ আমাদের লক্ষ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের হিসেবে পরিণত করা।’

 

হাইকমিশনার নাজমুল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ফরেন অ্যাফেয়ার্স ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন ১৯৮৫ সালে। ইন্দোনেশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়।

 

ব্রিটেনে আসার পর মানিয়ে নেওয়ার মতো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘গরম আবহাওয়া থেকে আসার ফলে লন্ডনের শীতল আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছে।’ তবে তিনি এখন যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের সম্পর্ক সক্রিয়ভাবে ও প্রতিশ্রুতি অনুসারে আরও এগিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

 

যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছেন বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘আমি এখানে একেবারে নতুন। মাত্র দুই মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। আমার মূল কাজ হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সবগুলো ক্ষেত্র আরও শক্তিশালী করা।’

 

হাইকমিশনার বলেন, ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ের সরকারি যোগাযোগ ও বৈঠক বাড়াতে চাই। আমরা চাই আমাদের নেতারা যখনই সুযোগ পান তখন যেন তারা ব্রিটিশ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাহলে আমরা আমাদের নেতাদের গাইডলাইন ও নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারবো। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক আয়োজন নিয়ে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।’

 

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য এখন প্রায় ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলারর কাছাকাছি। বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে আসে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। তার মেয়াদ শেষে এসব অংক আরও বেড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

 

বাংলাদেশি এ হাইকমিশনার বলেন, ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও অমূল্য। যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। তারা বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক ও উভয় দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তারা ব্রিটিশ রাজনীতি, সামাজিক ও সবক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছেন। আমি তাদের অংশগ্রহণ ও সক্রিয়তার মাত্রা আরও বাড়াতে চাই।’

 

কূটনৈতিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সঠিক ভাবমূর্তি তুলে ধরার ওপর গুরুত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন,  ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণমুক্ত ও অবিচারহীন একটি জাতি নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি এমন একটি দেশ গড়তে চেয়েছেন যে দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি থাকবে।’

 

নাজমুল আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন এবং সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো ফিরিয়ে আনছেন। ব্রিটিশ সমাজের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা আমাদের কাজ।’

 

বাংলাদেশকে বিক্ষিপ্ত সহিংস ঘটনা মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন হাইকমিশনার।

 

 

 

সূত্রঃবাংলা ট্রিবিউন