বিপদ যেন পিছু ছাড়ছেনা চলনবিলের কৃষকদের

মাহবুব হোসেন, নাটোর:
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারছেনা চলনবিলের কৃষকরা। টানা বৃষ্টির কারনে অনেক জমিতে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় ধানের গাছ বের হচ্ছে। এদিকে, মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি।

চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করার কারণে তলিয়ে গেছে নিচু এলাকার ধান। পানির নিচে ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। অনেকে আধাপাকা ধান কাটছে। তবে তীব্র শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষকের। হুমকির মুখে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান। গত তিন মৌসুম ধরে বন্যার পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ার কারণে বিপদ পিছু ছাড়ছেনা চলনবিলের কৃষকদের। সবমিলে ক্ষতি শিকার হতে হতে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা।

চলনবিলের কৃষকরা জানান, গত শনিবার থেকে একটানা শুরু হয়েছে অতি বৃষ্টি। সেই সাথে মাঝে মাঝে ঝরছে শিল এবং ঝড়। যার কারনে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও অতিবৃষ্টির কারণে ধান ঘরে তুলতে পারছেনা কৃষকরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিকরা টানা বৃষ্টি দেখে বাড়ি ফিরে গেছে। এতে করে ধান কাটা শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ধান পেকে গেলেও বাড়িতে নিয়ে আসতে পারছেনা কৃষকরা। টানা বর্ষনের ধানের গাছ বেরিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া অতিবৃষ্টির কারনে ধান মাড়াই এবং শুকানোর জায়গা (স্থানীয় ভাষায় খোলা) ডুবে যাওয়ার কারনে আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।


চলনবিলের হুলহুলিয়া গ্রামের কৃষক তৈৗফিক পরশ জানান, গত শনিবার থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যার কারণে ঠিকমত কেউ ধান ঘরে তুলতে পারছেনা। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক মাঠে বৃষ্টির পানিতে ধান তলিয়ে গেছে।

চৌগ্রামের কৃষক সোহেল হোসেন বলেন, গত বছর একবার এই সময় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কারনে চলনবিলের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবারও একই পরিস্থিতি শিকার হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে ধান কাটার কারনে আগে যে ধানের দাম ৮০০ টাকা ছিল এখন সে ধান ৬০০ টাকায় নিতে যাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, অতি বৃষ্টি এবং ঢলের পানিতে চলনবিলের নিচু এলাকায় ডুবে গেছে বোরো ধান। পানির নিচ থেকে ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। তবে তীব্র শ্রমিক সংকটের কারনে আরো বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।বন্যার পানি আতঙ্কে রয়েছে চলনবিলের হাজারো কৃষক। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষনে এবং ঢলের পানিতে হাবু ডুবু খাচ্ছে বোরো ধান। অব্যাহত বর্ষনের কারণে চলনবিলের নিচু এলাকার ধান এখন পানির নিচে।

চলনবিলের চৌগ্রাম, সারদা নগর, হুলহুলিয়া, ডাহিয়া, ডেহবাড়ি সহ বিভিন্ন মাঠের বোরো ধান ডুবে যাওয়ার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা। টানা বৃষ্টি এবং উজানের পানি বিভিন্ন নদী এবং খাল দিয়ে বিলে প্রবেশ করার কারণে নিচু এলাকার জমির ধান ডুবে গেছে। অনেকে নৌকা নিয়ে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসছে।


২০১৭সালের এই সময়ে চলনবিলে হঠাৎ বন্যার কারনে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বন্যার পানিতে ডুবে যায় অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। ধানের পাশাপাশি বাদাম, ভুট্টার জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। সে সময়ও ব্যাপক শ্রমিক সংকটের কারনে ধান ঘরে তুলতে বেগ পেতে হয় কৃষকদের। একই বছরে বোরো ধানের ক্ষতির কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার রোপা- আমন ধানের ওপর বিপর্যয় নেমে আসে। চলনবিলের অন্তত ৪০হাজার কৃষকের ১০হাজার হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে আরো চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চলনবিলের কৃষকদের। সে সময় সরকার থেকে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি অন্তত ৮হাজার কৃষককে কৃষি সহায়তা প্রনোদনা দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৭-১৮ মৌসুমে আবারো বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কারনে ক্ষতি মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। গত তিন মৌসুমে একটানা ক্ষতির কারনে অনেকটা দিশেহারা এই অঞ্চলের কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষনের কারণে বোরো ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের চরম বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও আমাদের হিসাব অনুযায়ী চলনবিলে অন্তত ৬০শতাংশ জমির ধান ঘরে তুলেছে কৃষকরা। বন্যার পানি আসলেও গত বছরের মতো ক্ষতি হবে।

তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির মধ্যেই আমি বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখে এসেছি। বিশেষ করে নিংগইন, পাটকোল এলাকার ধান হুমকির মুখে রয়েছে। অতিবৃষ্টি হতে থাকলেও ওই সব এলাকার ধান তলিয়ে যাবে। এজন্য ধানগুলোকে রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে বাধ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে অতিবৃষ্টির পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত চলনবিলের সারদা নগর এলাকায় পানি প্রবেশ করে ২০ থেকে ২৫বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এই বৃষ্টির মধ্যেও কৃষকরা ধান কাটছে। যাতে করে পানিতে যেন তলিয়ে না যায়।

স/অ