বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি বেড়েছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মন্দাবাজারে শেয়ার বিক্রি করছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশিরা ৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার কিনেছে। আর বিক্রি করেছে ৩ হাজার ৯২২ কোটি টাকার শেয়ার।

ফলে আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের নেট পজিশন ২৬৭ কোটি টাকা নেতিবাচক। এছাড়াও আলোচ্য সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, আস্থা সংকটে বিদেশিদের বিনিয়োগ কমতে পারে।

তবে তাদের মতে, বিনিয়োগ কমলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম স্বাভাবিক মূল্যস্তরের নিচে রয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ারের দাম যেখানে থাকার কথা, বর্তমানে তার চেয়ে কম দামে শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মতে, বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে বিপর্যয় চলছে। এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আস্থা সংকটে বিনিয়োগ কমতে পারে। তিনি বলেন, একটি দেশে বিদেশিরা যখন বিনিয়োগ করতে যায়, তখন কয়েকটি বিষয় দেখে। এর মধ্যে সুশাসন অন্যতম।

কেউ অন্যায়ভাবে তার পুঁজি হাতিয়ে নিলে বিচার হবে এ নিশ্চয়তা চায়। পাশাপাশি বাজার ওঠানামার ধরনও বিদেশিরা বিবেচনায় নেয়। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব ভালো অবস্থানে নেই। তবে তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে মূল্যস্তর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেই। ফলে এসময় কোনো বিনিয়োগকারী মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন।

ডিএসইর তথ্য অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বিদেশিরা ৭ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার কিনেছে। আর বিক্রি করেছে ৩ হাজার ৯২২ কোটি টাকার শেয়ার।

ফলে আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের নেট পজিশন ২৬৭ কোটি টাকা নেতিবাচক। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্রথম ৯ মাসে বিদেশিরা ৮ হাজার ৪২৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছিল।

এ সময়ে ৫ হাজার ১০১ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিল। বিপরীতে বিক্রি করেছিল ৩ হাজার ৩২৬ টাকার শেয়ার। ফলে বিনিয়োগের নেট পজিশন ছিল ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম ৯ মাসে একদিকে যেমন বিনিয়োগের নেট পজিশন কমেছে; পাশাপাশি আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও লেনদেন ও বিনিয়োগের নেট পজিশন কমেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এটি বাজারের জন্য ভালো সংকেত নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা খুবই সচেতন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় সাম্প্রতিক সময়ে বাজার নিয়ে তাদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে বিদেশিরা নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে খারাপ অবস্থা চলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। এ কারণে ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর শেয়ারবাজারে এক ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে।

বাংলাদেশের বাজারেও এর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে রয়েছে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এ দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর মানে হল, বাংলাদেশের বাজার ওই পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরপরও বিনিয়োগ কমলে তা ভালো লক্ষণ নয়।