বিএনপির অবস্থানে রাজশাহীর নেতাকর্মীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপির ৫ এমপির শপথগ্রহণ ও দলীয় মহাসচিব মির্জা ফকরুলের বিপরীত অবস্থান নিয়ে রাজশাহীর তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ চার এমপির শপথকে সঠিক বলেই মনে করছেন।

আবার কেউ কেউ মির্জা ফকরুলের অবস্থানকেও সঠিক বলে মনে করছেন। তবে বিএনপির এই টলমলে অবস্থান নিয়ে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। তাঁদের দাবি, দল নিশ্চয় সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। সঠিক নেতৃত্বের অভাবেই দলের ভিতরেই একাধিক সিদ্ধান্ত দেকা দিচ্ছে। এ কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এসব নিয়ে এখন আর তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফুল কবির বুলু বলেন, ‘বিএনপির বর্তশান অবস্থান নিয়ে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো আলোচনা দেখছি না। এসব নিয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহও নাই। দল সঠিকভাবে পরিচালনা হলে হয়তো সবাই আবার দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মনোযোগী হবে।’

নাজশাহী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘চার এমপির শপথ নেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রথমে তৃণমূল আমাদের মধ্যে একটু ভুলবুঝাবুঝি ছিলো। তবে যেহেতু তারা বলছেন, দলের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তেই তাঁরা এটি করেছেন, সেহেতু তিনি যেটা ভালো মনে করেছেন সেটিই করেছেন। তবে এই চার এমপি এখন যদি সংসদে গিয়ে দলের চেয়ার পার্সনের মুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সোচ্চার হতে পারেন, তাহলে যেটুকু হতাশা ছিলো সেটুকু হয়তো কেটে যাবে।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে রাতের আঁধারেই ভোট হয়ে গেছে। এ নির্বাচন নিয়ে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়, সাড়ে আট কোটি বাঙ্গালীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার পরেও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বিএনপি জোটের কয়েকজন প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের ওপরে অবশ্যই এলাকার জগণের চাপ রয়েছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে দলীয় ফোরামে কখনো মুখ খোলার সুযোগ পেলে সেখানেই আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘যে চার এমপি শপথ নিয়েছেন, নিশ্চয় দলের সিদ্ধান্তেই নিয়েছেন। কারণ দলীয়ভাবে এমপি হারুনকে সংসদ নেতাও মনোনীত করা হয়েছে। পাশাপাশি দলের মহাসচিব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটিও সঠিক আছে। তবে যারা শপথ নিয়েছেন তারা যে পদত্যাগ করতে পারবেন না তা নই। দলের কেওশল হিসেই হয়তো এসব সিদ্ধান্ত এসেছে।’

বিএনপি বুলবুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার যে কৌশলে আগাচ্ছে, সেই কৌশলও বিএনপি নিয়েছে। জনগণকে বিমুখ না করতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। এর মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে।’

রাজশাহী বিএনপির আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বিএনপি এখন টলমলে অবস্থা। সঠিক নেতৃত্বের যায়গায় নেই বিএনপি। এ কারণে দলের মধ্যে একাধিক সিদ্ধান্ত আসছে। দলের নেতাকর্মীরা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরেও অবস্থান নিচ্ছে। ফলে বিএনপির মধ্যে এখন বিভক্ত স্পষ্টতই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে দ্রুত দলের পুণঃগঠন ছাড়া শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ‘এটা একটা রাজনৈতিক ব্যাপার। তারা কীভাবে এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা এখান থেকে আমরা সেভাবে বুঝতে পারছি না। তারা যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন, যেভাবে নিচ্ছেন আমি মনে করি তারা সেগুলো দলের কথা দেশের মঙ্গলের কথা ভেবেই নিচ্ছেন।’

স/আর