বাবা-মায়ের রক্তস্বল্পতা থাকলে সন্তানেরও কি থ্যালাসেমিয়া হয়? প্রতিরোধে যা করবেন

রক্তস্বল্পতার রোগ থ্যালাসেমিয়া। বর্তমানে বহু মানুষকে এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোনো বয়সী নারী-পুরুষের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। বাবা-মা দুজন থ্যালাসেমিয়া রোগী হলে সন্তানেরও এই রোগ হতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন রক্তরোগ, ব্লাড ক্যান্সার, বিএমটি বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক (হেমাটোলজি) ডা. মো. কামরুজ্জামান।

থ্যালাসেমিয়া বাহক যার একটি জিন ত্রুটিযুক্ত আর থ্যালাসেমিয়া রোগী যার দুইটি জিন ত্রুটিযুক্ত। সুতরাং থ্যালাসেমিয়া বাহক আর থ্যালাসেমিয়া রোগী এক কথা নয়।

থ্যালাসেমিয়ার বাহক স্বাভাবিক মানুষরূপে বেড়ে ওঠে। তাই কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা, রক্তের পরীক্ষা ছাড়া তা বাহ্যিকভাবে বোঝার কোনো উপায় নেই।

থ্যালাসেমিয়া রোগী জন্মের পর ৬ মাস বয়স হতে দূর্বল ও ফ্যাকাসে হয়ে যায়, জন্ডিস দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পেটের প্লীহা ও লিভার বড় হয়ে যায়। ঠিকমতো শরীরের বৃদ্ধিও হয় না। রক্তস্বল্পতার জন্য প্রতি মাসে ১ থেকে ২ ব্যাগ রক্ত শরীরে নিতে হয়। ঘন ঘন রক্ত নেওয়ায় ও পরিপাক নালি থেকে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ অন্য অঙ্গের নানা রকম মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত রক্ত না নিলে থ্যালাসেমিয়া রোগী মারা যায়।

চিকিৎসা

নিয়মিত নিরাপদ রক্ত নেওয়া ও আয়রন চিলেশন, ডোনারের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ও জিন থেরাপি যা অত্যন্ত ব্যয় বহুল।

নিয়মিত রক্ত নিয়ে হেমাটোলজিস্ট বা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সঠিক চিকিৎসা নিলে থ্যালাসেমিয়া রোগীকে প্রায় ৩০ বছরের অধিক বাঁচানো সম্ভব। কিছু ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা নিলে রক্ত কম নেওয়া লাগে, প্লীহাও ছোট থাকে এবং প্লীহার অপারেশন লাগেই না।

প্রতিবার রক্ত নেওয়া ও আয়রন কমানোর ওষুধসহ অন্য খরচে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। তাই সবার পক্ষে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না এবং অকালে ঝরে যায় হাজারও প্রাণ। পরিবারে আসে দরিদ্রতা।

থ্যালাসেমিয়া বাহক আর থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবারের উপদেশ এক নয়

থ্যালাসেমিয়া বাহকের খাবার স্বাভাবিক মানুষের মতো। আয়রন জাতীয় খাবারের নিষেধ নেই বরং আয়রনের ঘাটতি হলে বেশি বেশি আয়রন জাতীয় খাবার খেতে দিতে হয়।

যেসব থ্যালাসেমিয়া রোগী নিয়মিত রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকে এবং যাদের শরীরে আয়রনের মাত্রা বেশি হয়ে যায় তাদের জন্য আয়রন জাতীয় খাবার নিষেধ করা হয়ে থাকে, শরীর থেকে আয়রন কমানোর জন্য ওষুধ খেতে হয়।

বাংলাদেশে সমস্যা কোথায়

থ্যালাসেমিয়া স্ক্রেনিং প্রোগ্রাম না থাকায়, অনেকেই জানেন না তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা। তাই অজান্তেই থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে এবং দিন দিন থ্যালাসেমিয়া রোগী বাড়ছেই। যেহেতু থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ তাই তো ভাইবোনের (চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো) মধ্যে বিয়ে এবং পরিবারের কারও থ্যালাসেমিয়া থাকলে থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

স্বামী-স্ত্রী উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ার রোগী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২৫ ভাগ, বাহক হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২৫ ভাগ আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ।

স্বামী-স্ত্রীর যে কোনো একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে কোনো সন্তানই রোগী হবে না তবে সন্তানের বাহক হওয়ার আশঙ্কা শতকরা ৫০ ভাগ, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ। স্বামী-স্ত্রীর একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী একজন স্বাভাবিক হলে কোনো সন্তানই রোগী হবে না তবে বাহক হবে যা কোনো সমস্যা না।

কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়

জনসচেতনতার মাধ্যমে দু’জন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলেই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে গর্ভবতী মায়ের পেটের বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ার রোগী কিনা তা নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১৪ সপ্তাহের গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর রক্ত-পানি নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়।

 

সূত্রঃ যুগান্তর