বাঘায় হলুদের বাম্পার ফলন,ব্যস্ত চাতাল মালিকরা

আমানুল হক আমান:
রাজশাহীর বাঘায় হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে এই হলুদ নিয়ে ব্যস্ত চাষি-ক্রেতা-বিক্রেতা ও চাতাল মালিকরা। উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেশি চেয়ে চাষ হয়েছে। এছাড়া বীজ সংরক্ষণে সরকারী ব্যবস্থাপনা না থাকায় মৌসুমে বীজ সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘদিনের বীজ সংরক্ষণাগার নির্মানের দাবি চাষীদের।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও বাজার ঘুরে জানা যায়, মাঠে কৃষকরা হলুদ উঠাতে ব্যস্ত। চাষীরা বিভিন্ন যানবাহনে করে বস্তা বস্তা হলুদ বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছে। ব্যবসায়ীরা কাঁচা হলুদ কিনে চাতালে সিদ্ধ করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে শুরু করেছে।

আড়ানী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোচর মহল্লার হলুদ চাষী নিজাম উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন, হাফিজুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলায় পাবনায়, গাঙ্গীয়া, সোনামুখী, ডিমলা বারী-১ প্রভৃতি জাতের হলুদ চাষ হয়। এবছর গাঙ্গীয়া জাতের হলুদ ফলন ভাল হয়েছে। এ জাতের হলুদ আকারে মোটা এবং রং অন্যান্য হলুদের তুলনায় ভাল। প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৫৫ মণ উৎপাদন হয়।


প্রতিমণ কাঁচা হলুদ বিক্রি হচ্ছে আট’শ টাকা থেকে এক হাজার দুই’শ টাকা পর্যন্ত। হলুদ চাষে জৈবসার ব্যবহারে খরচ খুব কম হয়। বিঘা প্রতি সার ও বীজসহ খরচ হয় প্রায় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির কাঁচা হলুদ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকায়।

কুশাবাড়িয়ার গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন জানান, বাগানের ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদ চাষ ভাল হয়। এক সাথে ফল ও হলুদ দুটো পাওয়া যায়।


হামিদকুড়া গ্রামের বিরাজ উদ্দিন জানান, এ বছর বীজের দাম বেশী হওয়ায় এবং রোপণের সময় বীজ সংকটের কারণে বেশী জমিতে আবাদ করা যায়নি। হলুদ উঠানোর সময় বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। সরকারি ভাবে বীজ সংরক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে আগামীতে অনেক চাষী হলুদ চাষ করতে আগ্রহী হবে। সরকারিভাবে বীজ সংরক্ষণাগার নির্মানের দাবি করেন চাষীরা।

হলুদ চাষী জহুরুল ইসলাম এবছর ১০ বিঘা জমিতে হলুদের চাষ করে সাড়ে ৫০০ মণ হলুদ পেয়েছি। হলুদ ব্যবসায়ী একরামুল হক জানান, আড়ানীর হলুদের সুনাম দেশ ব্যাপী রয়েছে। আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার হাটে হলুদ কিনে ঢাকা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গাতে নিয়ে যায়।


আড়ানীর চাতাল ব্যবসায়ী দুলু জানান, উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় পাঁচ শতাধিক চাতাল রয়েছে। কাঁচা হলুদ কিনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে কিছু দিন ঘরে রেখে বিক্রি করি। বর্তমানে ৪০ কেজি শুকনা হলুদ চার হাজার পাঁচ’শ টাকা থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমি প্রায় তিন হাজার মন কাঁচা হলুদ কিনে সিদ্ধ করে শুকানো হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এবছর উপজেলায় সাড়ে ছয়’শ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা আট হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া উপজেলার পাশ দিয়ে বড়াল নদী বয়ে যাওয়ায় জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। উচু ও ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদের ফলন ভাল হয়।
স/শ