সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ভোগ, এল কিংবা হার্পারস বাজারের মত বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলোতে পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপনে নামী ডিজাইনারদের কাপড় পড়ে, বহুমূল্য গয়না গায়ে চোখ ধাঁধানো মেকআপে মোহনীয় সব ভঙ্গিমায় নারীকে দেখা যায়।
গ্ল্যামারাস সেইসব মডেলদের মুখ থাকে গম্ভীর, দুঃখী, মলিন আর অভিব্যক্তিহীন।
মার্কিন একজন ফ্যাশন ফটোগ্রাফার জেনিফার মস বলছেন, ফ্যাশন ম্যাগাজিনের মডেলদের দেখতে বেশিরভাগ সময় প্রাণহীন ‘মরদেহে’র মত দেখা যায়।
যদিও নারীকে উপস্থাপনের এই রীতি শত বছরের পুরনো, কিন্তু এখন খুব ধীরে হলেও এই রীতি বদলাচ্ছে।
বিশ্বের অনেক নামী ব্র্যান্ডের যারা ফ্যাশন বিভাগটি দেখাশোনা করেন, এবং যারা মডেলদের শিল্পসম্মতভাবে উপস্থাপনের নির্দেশনা দেন, তারা এখন একটু ভিন্নভাবে নারীকে উপস্থাপন করছেন।
এখন দেখা যাচ্ছে, সাহসী মডেল। এরা সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন, কখনো হাসছেন। তারা কর্মজীবী নারী, সফল এবং সুখী।
মারি ক্লায়ারের ফ্যাশন ডিরেক্টর জেইন পিকারিং বলেছেন, নারীকে এখন বিজ্ঞাপনচিত্রে বা ফ্যাশন ম্যাগাজিনে উপস্থাপনের ধরণ আগের চেয়ে অনেক বদলেছে।
তিনি বলছেন, এর পেছনে একটি বড় কারণ হয়ত নারীর নিজের অর্থনৈতিক সক্ষমতা যেকোন সময়ের চেয়ে এখন বেশি। সেই সঙ্গে নিজের আত্মমর্যাদার ব্যপারেও সচেতনতা বাড়ছে নারী ক্রেতা এবং ভোক্তার। যা হয়ত সামনের দিনে আরো বদলে দেবে নারীকে উপস্থাপনের ভঙ্গিমা।
জেনিফার নিজে এক সময় ছিলেন বিশ্বখ্যাত এক ফ্যাশন ম্যাগাজিনের ফটোগ্রাফার। তিনি বলছেন, একজন নারী, একজন কন্যা সন্তানের মা এবং একজন ভোক্তা হিসেবে, যেটি সবচেয়ে আশংকার বিষয়, তা হলো বিজ্ঞাপনে যে নারীকে দেখানো হচ্ছে, হয় তারা যৌন সহিংসতার শিকার কোন ব্যক্তি। অথবা তারা ‘মরা’ কোন মানুষ।
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা এবং নামী ফ্যাশন ম্যাগাজিন নিয়ে গবেষণার পর, জেনিফার কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছেন, নারীকে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে নির্জীব, দুর্বল আর ব্যক্তিত্বহীনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
তার তালিকার প্রথমেই রয়েছেন, ভীত দৃষ্টি চোখে নিয়ে হাজির হওয়া মডেল। এই নারী সন্ত্রস্ত বা সতর্ক। হয়ত কোন পুরুষের কাছ থেকে পালাচ্ছেন। অথবা তিনি মৃত কোন মানুষ।
দ্বিতীয় বিভাগে আছে, উত্তেজক কাপড় পড়ে হাজির হওয়া মডেল। দেখে মনে হবে, এ মডেল বিছানায় শুয়ে আছেন, গায়ে হয়ত কোন কাপড় নেই। ভঙ্গিটি থাকে চূড়ান্ত যৌনাবেদনময়।
তৃতীয় বিভাগে আছে শিশুসুলভ ভঙ্গি নিয়ে উপস্থাপিত নারী। অথবা চেহারা ঝাপসা করে দিয়ে কেবল পণ্যের বিজ্ঞাপনটুকু হাইলাইট করা।
জেনিফার বলছেন, নামী ম্যাগাজিনগুলোতে নারীকে গ্ল্যামারাস দেখানোর মাধ্যমে একটি বার্তা দেয়া হয় যে, যখন তুমি রাস্তায় হাঁটবে তোমাকে নম্র হতে হবে, তোমাকে সচকিত থাকতে হবে, তোমাকে ভীতসন্ত্রস্ত হতে হবে।
কিন্তু কি নিয়ে এত ভয় পেতে হবে তাদের? প্রশ্ন তুলেছেন জেনিফার।