বাঘায় প্রতিবন্ধী দ্বিজেন জীবন যুদ্ধে থেমে নেই


বাঘা প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী স্টেশন বাজারের ভিতর দিয়ে হাঁটতেই চোখে পড়ে রাস্তার পাশে বসা এক তালা-চাবি মেরামতকারী। বাম হাত আর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির সহায়তায় চলছে এই মেরামত কাজ। মেরামতকারী হলেন প্রতিবদ্ধী দ্বিজেন্দ্রনাথ সরকার। তাকে সবাই দ্বিজেন বলেই ডাকে। বয়স ৬২ বছর। তার বাড়ি আড়ানী স্টেশন বাজারসংলগ্ন বেড়েরবাড়ি গ্রামে।

দ্বিজেনের বয়স যখন দেড় বছর তখন খেলতে খেলতে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর জ্বর, আর তার পরেই দুই হাত এবং দুই পা শুকিয়ে যেতে থাকে। গরীর বাবা-মা সে সময়ে অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। তারপর থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। শরীরের ডান পাশ একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে। তবে তার বাম হাতের অগ্রাভাগে কিছুটা শক্তি পান তিনি। এ নিয়ে ১৫ বছর বয়সে চাবি মেরামতের কাজে নেমে পড়েন। চাবি মেরামতের কাজ নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।

ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চেপে ধরে বাম হাতের সহযোগিতায় তিনি জীবনযুদ্ধ করে চলেছেন। চোখ সামান্য সমস্যা থাকায় একটা ভাঙ্গা চশমা ব্যবহার করেন। এই মেরামতের কাজ করে তিনি প্রতিদিন যে টাকা আয় করেন। সামান্য আয় দিয়েই ৫ সদস্যের পরিবারের খরচ জোগান।

বর্তমানে এক ছেলে দুই মেয়েকে ধারদেনা করে বিয়েও দেন। ছেলে নিপেন (৩২) বিয়ে করেই আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু ধারের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে ভাবছেন দ্বিজেন ও তার স্ত্রী দুলালী রাণী।

একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, অন্যদিকে তেমন কাজ কর্ম না থাকায় মাত্র ৮০/৯০ টাকা আয় করে কোনো দিন দু-বলা, দু-মুঠো খাবার জোটে, আবার কোনো দিন জোটে না। কথাটি বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন দ্বিজেন। দ্বিজেনের চোখের পানি বলে দিচ্ছে তিনি কতটা কষ্টে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরো বলেন, নিজের কোনো স্থায়ী জায়গা নেই। যে জায়গায় বসেন তিনি কাজ করেন, সেটাও আড়ানী স্টেশন বাজার হায়দার আলীর সাইকেল পার্টসের দোকানের বারান্দায়।

তিনি বলেন, এ বারান্দা ও বারান্দা এভাবেই চলছে তার কাজ। আমার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ প্রতিদিন এক হাত আর এক পায়ের উপর ভর করেই বাজারে আসতে হয়। তিনি আরও বলেন, এই দুঃখ ভরা জীবনে তেমন কেউ কোনো দিন সাহায্য করেন নি। বাঘা প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে মাসে যে টাকা পাচ্ছে আর নিজের কিছু আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার।

সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তি যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলে একটু ভালভাবে জীবন যাপন করতে পারেন বলে দ্বিজেনের আবেদন।

আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, দ্বিজেন একজন দরিদ্র মানুষ। তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।

স/আ.মি