বাঘায় পদ্মার ভাঙ্গন পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয় সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ ইউএনও’র

আমানুল হক আমান, বাঘা :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরের মধ্যে ভাঙ্গনের কারনে হুমকির মধ্যে পড়েছে চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়। যেকোন সময় পদ্মার গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে বিদ্যালয়টি। ফলে বিদ্যালয়ের ৬১৩ জন শিক্ষর্থী লেখাপড়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পদ্মার ভঙন থেকে মাত্র ২০ মিটার দুরে অবস্থান করছে বিদ্যালয়টি।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার পদ্মার চরের মধ্যে ভাঙ্গন থেকে বিদ্যালয়ের দুরত্ব ২০ মিটার। এ বিদ্যালয় যে কোন সময় পদ্মা গর্ভে বিলিত হয়ে যেতে পারে বলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা আশংকা করছেন। এছাড়া আলাইপুর থেকে লক্ষীনগর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভঙন দেয়া দিয়েছে। এরমধ্যে আলাইপুর, কিশোরপুর, গোকুলপুর, কালিদাসখালী, জোতকাদিরপুর, দিয়ারকাদিরপুর, চকরাজাপুর, লক্ষীনগরসহ ৯টি গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়েছে। গত তিনদিনে অর্ধশতাধিক বাড়ি, আম বাগান, কুল বাগান, পেয়ারা বাগান, সাকসবজি, বিভিন্ন ফসলি জমিসহ হাজার হাজার বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল আযম, ইউনিয়ন মেম্বার আনোয়ার শিকদার, আবদুল শিকদার, তোফাজ্জল শিকদার, হাসান শিকদার, বাক্কার শিকদার, ইসমাইল হোসেন, জহুরা বেগমসহ অর্ধশতাধিক ব্যাক্তি বাড়িঘর অন্যাত্রে সরিয়ে নিয়েছে। তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাবন করছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নাত আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বিদ্যালয় ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাউসা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান, গড়গড়ি ই্উনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিুজুল আযম, বাঘা প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক আমানুল হক আমান, প্রচার সম্পাদক সেলিম আহম্মেদ ভান্ডারী, সদস্য গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন, চকরাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল সালাম প্রমুখ।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঘার পদ্মার চরে মধ্যে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাস খালী, পূর্ব চকরাজাপুর এগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়। চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর এই দুটি উচ্চবিদ্যালয়। এরমধ্যে চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ৬১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম আতংকে।

চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী পপি খাতুনের বাবা আবদুর রাজ্জাক, বৃষ্টি খাতুনের বাবা ওহায়েদ মোল্লা, ৬ষ্ট শ্রেনীর শিক্ষার্থী জনি সরদারের বাবা কুরবান সরদার বলেন, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে আতংকে থাকি। বিদ্যালয়টি ১৯৭৮ সালে স্থাপিত হয়ে। এরমধ্যে ১৯৯৮ সালে, ২০১২ সালে ও ২০১৮ সালেসহ তিনবার স্থানান্তর করা হয়। ইতোমধ্যে স্কুলের পুরাতন টিনসেড ভবন ও মেয়েদের কমনরুম ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষনা করা হলেও পদ্মার কোল ঘেষে গড়ে উঠা প্রিয় বিদ্যালয়টিকে এক পলক দেখাসহ কিভাবে রক্ষ করা যায় তার জন্য বিদ্যালয়ে ছুটে এসেছিল শত-শত শিক্ষার্থী এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী সেজুতি খাতুন, স্বর্ণা খাতুন, মেগলা খাতুন, জনি সরদার, আবু দাউদ, সাহাদত হোসেন, হাসিবুল ইসলাম, সাম্মি খাতুন, শাকিলা খাতুন, দশম শ্রোণির শিক্ষাথী বৃষ্টি খাতুন, চাঁদনি খাতুন, পপি খাতুন, ইতি খাতুন, সাবানা খাতুন, আখি খাতুন, জেসমিন আক্তার, আকাশ আহম্মেদ, সুবর্না খাতুন জানায়, পদ্মায় ভাঙ্গনের কারনে স্কুল মাঠে দৌড়া কড়ি করে খেলতে পারিনা। ভয় লাগে দৌড়াতে গিয়ে পদ্মায় পড়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

একই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, পদ্মা ভাংতে ভাংতে বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০ মিটার দুরে অবস্থান করছে পদ্মার ভাঙ্গন। আজ স্কুল ভালো দেখে গেলাম, কাল এসে দেখতে হবে স্কুল নেই। ফলে আমরা চিন্তায় আছি।

চকরাাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, পদ্মার পাড় ভাংতে ভাংতে বিদ্যালয়ের নিকট এসে গেছে। ফলে ছেলে-মেয়েদের ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিযুল আযম বলেন, বিদ্যালয়ের বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নাত আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। তারা বিদ্যালয়টি স্থান নির্ধারন করে অন্যাত্রে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এলাকার লোকজনকে সাথে নিয়ে আলোচনা করে দুই/এক দিনের মধ্যে স্থান নির্ধারণ করব।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শন করে, স্থানীয় জনগনের সাথে আলোচনা করে এবং পরিস্থিতি বুঝে সরে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করার নির্দেশ নেয়া হয়েছে।

স/অ