বাঘায় পদ্মার ভাঙ্গনে হুমকিতে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

আমানুল হক আমান, বাঘা :
রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরাঞ্চলে ভাঙ্গনে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়া-লেথা অনিশ্চিতার মধ্যে পড়েছে।
পদ্মার চরে সরেজমিনে দেখাযায়, উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯০ মিটার, পূর্ব চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১০ মিটার  ও চৌমাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫০ মিটার ভাঙ্গন থেকে দুরে রয়েছে। এই বিদ্যালয় তিনটি যে কোন সময় পদ্মা গর্ভে বিলিত হয়ে যেতে পারে বলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা আশংকা করছেন। তবে চকরাজাপুর এলাকা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর পদ্মা গর্ভে ইতিমধ্যে বিলিন হয়ে গেছে। তাঁরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যাত্রে আশ্রয় নিচ্ছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঘার পদ্মার চরে নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাস খালী, পূর্ব চকরাজাপুর এগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়। চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর এ দুটি উচ্চ বিদ্যালয়েল মধ্যে চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩’শ ২১ জন শিক্ষার্থী, পূর্ব চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১‘শ ৫২ জন ও চৌমাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১’শ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে এই বিদ্যালয় তিনটির শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম আতংকে।
চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিলা খাতুন সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, আমি স্কুলে আসি দুই সেট পোশাক নিয়ে। বাড়ি লক্ষীনগর চরে। স্কুলে আসতে চারবার পদ্মার নালা পার হতে হয়। স্কুলে আসতে অনেক সময় লাগে। কোন কোন সময় নৌকা, আবার কোন কোন সময় পায়ে হেটে স্কুলে আসতে হয়। ফলে জামা-কাপড় ফিজে যায়। আবার বই, খাতা ভিজে যায়। এভাবে চলছে প্রায় পাঁচ বছর। সামনে ৩ আগষ্ট থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। সঠিক সময়ে স্কুলে আসতে পারব কিনা চিন্তায় আছি।

 
চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র জনি সরদার, আবু দাউদ, সাহাদত হোসেন, হাসিবুল ইসলাম, সাম্মি খাতুন জানায়, ভাঙ্গনের ভয়ে ঠিক মতো স্বুলে যেতে পারছিনা।

 

চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী জনি সরদারের বাবা কুরবান সরদার বলেন, বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে আতংকে থাকি। পদ্মায় ক্রমাগত পানি বৃদ্ধিতে পাচ্ছে। ফলে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরের মানুষ। ভাঙনের কবলে পড়েছেন চরের পলাশি ফতেপুর, চকরাজাপুর, খায়েরহাট, মর্শিদপুর, নারায়নপুর, মিস্ত্রিপাড়া, জোতাশি, লক্ষিনগর, পাকুড়িয়া গ্রাম, পানিকামড়া, আলাইপুর, গঙ্গারামপুর, কিশোরপুর, গোকুলপুর, আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, মানিকের চর  এলাকা। ভাঙ্গনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে পদ্মার চরের চকরাজাপুর ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, ঘর-বাড়িসহ কয়েক হাজার আবাদি-অনাবাদি জমি ও গাছপালা। ভিটে-মাটি হারিয়ে পথে বসেছে শতাধিক পরিবার। এছাড়া মানবেতর জীবনযাপন করছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

 
চকরাাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, পদ্মার পাড় ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের নিকট এসে গেছে। এছাড়া সামনে বাচ্চাদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা ফলে প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

 

একই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আহম্মদ আলী বলেন, পদ্মা ভাংতে ভাংতে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার দুরে অবস্থান করছে। আজ স্কুল ভালো দেখে গেলাম, কাল এসে দেখতে হবে স্কুল নেই। ফলে আমরা চিন্তায় আছি। বিদ্যালয় স্থানান্তর করা জরুরি।

 
এক নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জালাল উদ্দিন বলেন, আতারপাড়া, চৌমাদিয়া ও মানিকের চর নিয়ে এ ওয়ার্ড গঠিত। এ ওয়ার্ডে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৩৫ জন। এই ওয়ার্ডে ভাঙনের তীব্রতা দেখে অনেকেই গাছপালা ও অপরিপক্ক রবি ফসল কেটে নিচ্ছেন। যা কোন ফসল হিসেবে কাজে না আসলেও গরু ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। এছাড়া হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে। দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে চরের মানুষ গরু ছাগল নিয়ে দুশ্চিন্তিায় আছে। গত শনিবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা দুস্থদের মাঝে ১০ কেজি চাউল, দুই কেজি চিড়া ও আধা কেজি গুন ত্রান হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী বলেন, প্রতিষ্টান তিনটির বিষয়ে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার (৩০ জুলাই) নদী ভাঙন ও বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। তবে বিদ্যালয় তিনটি অন্যাত্রে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

স/অ