বাঘা্ প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী ঈদ করতে পারছে না। তারা দীর্ঘ একযুগ যাবত নিরলস ভাবে পাঠাদান করে এলেও কোন প্রকার বেতন-ভাতা পচ্ছেনা। ফলে তাদের পরিবারের সবার জীবন চলছে অর্ধাহারে-অনাহারে। ফলে সামনে ঈদ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলায় শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি পর্যায়ে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসহ ২৪টি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান এমওিভুক্ত হলেও বাঁকি ১৩টি আজও এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী মানবতের জীবনযাপন করছেন। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, মহাবিদ্যালয়, বিএম কলেজ, আলিম মাদ্রাসা, ডিগ্রী কলেজ।
সূত্র মতে, শর্তাবলি পূরনের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি নেয়া, অবকাঠামো নির্মাণ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগসহ প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যায় হয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের। ফলে কেবল টিউশন ফির ওপর নির্ভরশীল এইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ইতোমধ্যেই এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ফলে এলাকার শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী তাদের শেষ সম্বল বিক্রি করে ডোনেশন দিয়েছে লাখ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে বেতনের আশায় তারা নিঃস্ব হওয়ার পথে।
একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী বলেন, শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে মোটা অঙ্কের ডোনেশন দিয়ে চাকরি নিয়েছি। প্রায় একযুগ যাবত বেকার শ্রম দিচ্ছি, এখন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। আদৌ হবে কি না তা-ও জানা নেই। এখন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারিভাবে কোনো কিছু পাইনি।
এমপিওভুক্তি না হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বানিয়াপাড়া নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুলতানপুর গোরস্থান দাখিল মাদ্রাসা, জোতকাদিরপুর দাখিল মাদ্রাসা, আড়ানী দাখিল মাদ্রাসা, খানপুর দাখিল মাদ্রাসা, পারসাওতা আলিম মাদ্রাসা (আলিম শাখা), মনিগ্রাম আদর্শ মহাবিদ্যালয়, ইসলামি একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়, কারিগরি ও কৃষি কলেজ (বিএম ও কৃষি শাখা), আব্দুর রহমান কারিগরি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ, তেঁতুলিয়া-পীরগাছা বিএম কলেজে (ভোকেশনাল, এইচএসসি, সাধারণ শাখা), চকরপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, আড়ানী আলহাজ্ব এরশাদ আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজ (ডিগ্রী শাখা)।
সংশ্লি¬ষ্ট বোর্ড থেকে এসব প্রতিষ্ঠান আট থেকে ১০ বছর আগে স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থচ এমপিওভুক্ত হয়নি। উলে-øখ্য গত ২০১০ সালে এক হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলেও বাঘা উপজেলায় মাত্র একটি মহিলা কলেজের ডিগ্রী শাখা এমপিওভুক্ত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের রাজনৈতিক নেতারা এমপিওভুক্তি না হওয়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফলে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছে।
আড়ানী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফ বলেন, বেতন না পেয়ে চাকরি করছি। অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করা কতটা কষ্টকর তা বলা বাহুল্য।
উল্লেখ্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আড়ানী দাখিল মাদ্রাসা প্রায় চার যুগ ও চকরপাড়া দাখিল মাদ্রাসা আড়াই যুগেও এমপিওভুক্ত হয়নি। ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষক অবসরে গেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া কিছু শিক্ষক অবসরের অপেক্ষায় রয়েছে। তুবুও এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে এই সকল শিক্ষকরা। ফলে ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী সামনে ঈদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স/আ