বাঘায় ঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বিকুল


বাঘা প্রতিনিধি :
রাজশাহীর বাঘায় কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বিকুল আলী। ঘরের চালা উড়ে তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে বিপাশা খাতুনের সমস্ত বই খাতা ভিজে গেছে। পাশে হাবিবুর রহমান কালুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই বাড়ির বারান্দায় সোমবার (৩ এপ্রিল) রোদে বই খাতা শুকাতে দেখা যায়।
এ সময় বিপাশা খাতুন জানায়, আমার বাবা দিন মুজুর, দিন আনে দিন খায়।

অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে তিন সদস্যের সংসার চালায়। আমার দাদার জমিতে দুই কক্ষের টিনের ছাপরা ঘরে বসবাস করি। হঠাৎ রোববার (২ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে টিনের চালা উড়ে দক্ষিণে পুকুরে পড়ে যায়। এ সময় বৃষ্টিতে সমস্ত বই খাতা ভিজে যায়। বাড়িতে থাকার কোন জায়গা নেই। তাই পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বই খাতা শুকাচ্ছি। বিপাশা খাতুন তেথুলিয়া নওদাপাড়া গ্রামের ও তেথুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

এদিকে ঝড়ে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের তেথুলিয়া বাজারের দোকানপাট উড়ে গেছে। বাজারের পাশের তেথুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও তেথুলিয়া পীরগাছা টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিজনেন্স ম্যানেজমেন্ট কলেজ ভবনের চালা উড়ে গেছে। তেথুলিয়া নওদাপাড়া, কান্দিপাড়া, ফতিয়াড় দাঁড়, পীরগাছা গ্রামে কালবৈশাখী ঝড়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া তেথুলিয়া বাজারে একটি বিদ্যুতের খুটি ভেঙ্গে গেছে।

এ বিষয়ে তেথুলিয়া বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি দোকান ঘরের মধ্যে কাজ করছিলাম। হঠাৎ ঝড়ে ঘরের চালা উড়ে ১০০ মিটার দুরে তেথুলিয়া সবজি বাজারে কড়ই গাছে গিয়ে পড়ে। সেই ঘরের ১৬ বান্ডিল টিনের ঘর পাশে মসজিদের ছাদে ও গাছে কিছু টিন ঝুলে থাকলেও বাকি টিনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এছাড়া মদন আলীর দোকান, সুজন আলীর বাড়ির চালা, লেদু প্রাং এর দোকান, কামরুল ইসলামের দোকানের চালা উড়ে গেছে।

নওদাপাড়া মিশন আলীর ঘর, তেথুলিয়া কান্দিপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নানের ঘরের উপর গাছ পড়ে স্ত্রী নাসরিন আহত হয়। ফতিয়ার দাঁড় গ্রামের মুক্তার আলীর ২৫ বছর বয়সের একটি আড়াজাম গাছ উপড়ে গেছে। পাশে মুন্টু ও জালেম আলীর ঘর উড়ে গেছে। রাস্তার পূর্বদিকে আহমেদ আলীর ঘর ভেঙ্গে কোরবানির খাসি চাপা পড়ে পা ভেঙ্গ গেছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন আহমদ আলী। শহিদুল ইসলাম, জিন্দার আলী, সুজন আলী, কাচু উদ্দিনের বাড়িঘর সহ শতশত আম গাছ, কলা, মেহগনি গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতানা বলেন, গম, মসুর উঠে গেছে। কিছুটা কাঠ জাতীয় ও আমের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমান নিরুপনের জন্য কাজ করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, হঠাৎ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, উপড়ে গেছে গাছপালা, উড়ে গেছে বাড়ির চালা। ৫টি গ্রামে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে টিনের চালা উড়ে গাছে বেধে আছে। বৈদ্যুতের খুটি ও তার ছিঁড়ে লাইন নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি।