ছুরিকাঘাতে আহত রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থী তিহাম : দুই মাসেও গ্রেফতার হয়নি হামলার মূলহোতা কানন


নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ছুরিকাঘাতে আহত রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী তিহাম আহম্মেদের ওপর হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। এমনকি হামলার মূলহোতা কাননসহ তার সহযোগীরা আদালতে আত্মসমর্পণও করেন নি। ফেসবুকে সহপাঠীর ছবিতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেওয়া নিয়ে বিতর্কের জের ধরে হামলার এ ঘটনা ঘটে। মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র তিহামকে ছুরিকাঘাত এবং লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন তার সহপাঠী গোলাম কিবরিয়া কানন ও তার বহিরাগত সহযোগীরা।

গত ১ ফেব্রয়ারি ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর তিহামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় তিহামের বড় বোন শাকিলা আফরোজ মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় কাননসহ তার অজ্ঞাত সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, মামলা দায়েরের পর থেকেই প্রধান আসামি কানন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি প্রতিনিয়ত মামলা প্রত্যাহারের জন্য হামলার শিকার তিহামকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এ ধরনের একটি অডিও রেকর্ডও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এসেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অজ্ঞাত কারণে কানন এবং তার সহযোগীদের গ্রেফতার করছেন না বলে স্বজনরা অভিযোগ করছেন।

তিহামের বড় বোন শাকিলা আফরোজ বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কানন আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করেছে। এসময় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি কাননের মামা অমিসহ অন্য সহযোগীরা তিহামকে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে লোহার রড এবং বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। ছুরিকাঘাতে তার ডান পায়ের হাঁটুর উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঠিকভাবে হাটতে পারছে না। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গেও আঘাত রয়েছে। তিহাম রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এখনও খুব খারাপ। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাননকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে নি। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কানন বিভিন্নভাবে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। মামলা প্রত্যাহার না হলে আবারও হামলার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ কী কারণে কাননকে গ্রেফতার করছে না, এটি আমাদের বোধগম্য নয়। এমতাবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি। আমার ভাই তিহামসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বাইরে চলাফেরা করতে পারছি না। আমরা অতিদ্রুত কাননকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

হামলার শিকার তিহাম বলেন, কয়েকদিন আগে কানন আমাকে ফোন দিয়েছে। ফোন দিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। ফোনের অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে। এ অবস্থায় আমি অসহায় বোধ করছি। বাড়িতে বন্দি আছি। কলেজে যেতে পারছি না। ফলে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। আবারও যে কোনো সময় আমার ওপর হামলার আশঙ্কা করছি। শারীরিক অবস্থাও খুব খারাপ। পুলিশ কানন এবং তার সহযোগীদের গ্রেফতার করলে এমনটি ঘটত না।

কানন গ্রেফতার না হওয়া প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালিয়া মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) আবু সাঈদ সোহাগ বলেন, কানন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বিদিরপুর এলাকার জাকারিয়া হোসেনের ছেলে। তাকে গ্রেফতারের জন্য দুই বার তার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া রাজশাহী মহানগরীসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। হামলায় অংশ নেওয়া অমিসহ তার অন্য সহযোগীদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে। আসামি যেন দ্রুত গ্রেফতার হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে। এছাড়া হামলার শিকার তিহাম এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ সতর্ক থাকবে।