বাগাতিপাড়ায় খেজুরের গুড়ে চিনি

বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ব্যাপক হারে চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে খেজুর গুড়। গুড়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত চিনির দাম কম হওয়ায় গুড়ের সঙ্গে এসব চিনি মেশানো হচ্ছে। এক শ্রেণির অর্থলোভী গুড় উৎপাদনকারীরা সুস্বাদু গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করে তা অবাধে বাজারজাত করছেন।

এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে । এছাড়া এই ভেজাল গুড় স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। এসব গুড় খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন সাধারন মানুষ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন এসব ভেজাল ও কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় শিশুদের লিভার ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

শনিবার সকালে সরেজমিনে মাড়িয়া গ্রামের রেলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাছিরা ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসছেন। এরপর মাটির বানানো বিশেষ চুলায় সংগ্রহ করা রস জ্বাল দেওয়া হচ্ছে। পাশেই রয়েছে সাদা বস্তায় চিনি। কড়াইয়ে রস জ্বাল দেয়ার পর তা লাল বর্ণ হলেই তাতে চিনি মেশানো হচ্ছে। চিনিগুলো রসের সঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। এরপর ওই গুড়ে হাইড্রোজ ও ফিটকারি মিশিয়ে গুড়ের রং উজ্জ্বল করা হচ্ছে।

জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী রাজশাহীর বাঘা এলাকার গাছিরা স্থানীয় মালিকদের নিকট থেকে খেজুর গাছ লিজ নিয়ে অবাধে এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই তারা শীত মওসুমে এসব এলাকায় এসে ভেজাল গুড় তৈরির ব্যবসা করছেন। এদিকে বর্তমান স্থানীয় বাজার মূল্যে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫২ টাকা। অপরদিকে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা দরে। অন্যদিকে প্রতি ৬০ কেজি গুড় তৈরির খেজুর রসে মেশানো হচ্ছে ৫০ কেজি চিনি।

উপজেলার গালিমপুরের গাছি আসকান বলেন, চিনিকে জ্বাল দিলে তা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। আর শুধু খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করলে পরিমাণে গুড় কম হয়। সে জন্যই অধিকাংশ গুড় উৎপাদনকারী গাছি খেজুরের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছেন। তিনি বলেন, চিনি মিশ্রিত গুড় শক্ত এবং কেমিক্যালের কারণে উজ্জ্বল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা কিডনি, হার্ট, ব্রেণ ও লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, ভেজাল গুড় তৈরির অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স/অ