বাগাতিপাড়ায় একমাসে ১৮ জনের আত্মহত্যার চেষ্টা, ৪ জনের মৃত্যু

মঞ্জুরুল আলম মাসুম:
বাবা কাঠের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কোন রকমের সংসার চালান। ব্যবসাও মন্দা। সংসারে আগে সচ্ছলতা থাকলেও বর্তমানে নেই। ছেলে মেয়েদের চাহিদাও ঠিক মতো পুরণ করতে পারেন না। দীর্ঘ দিন থেকে মোটর সাইকেল কিনে চাচ্ছিলেন। বাবার আর্থিক অনটনে দিতে পারেননি। ভাল পোষাকও জুটে না। অন্য বন্ধুদের মতো দামী পোষাক, দামী গাড়িতে চড়তে পারেন না। তাই মনের দুঃখে একসাথে অনেকগুলি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। বাড়ির লোকজন বুঝতে পেরে দ্রুত স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে বেঁচে যান। কী কারনে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন জানতে চাইলে নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে নাটোরের বাগাতিপাড়ার এক যুবক এসব কথা বলছিলেন।

অন্যদিকে প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এখবর জানতে পেরে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অপর যুবক। তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে ফিরেন। এভাবে কেউ কেউ বেঁচে ফিরলেও আত্মহত্যায় অনেকের জীবনই অকালে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি নাটোরের বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মডেল থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। শুধু চলতি বছরের জুন মাসেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ১৮জন নারী-পুরুষ। এদের মধ্যে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে ৪ জন। আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের মধ্যে ১৩ জনই নারী এবং মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যেও রয়েছে ৩ জন নারী। শিক্ষার্থী, যুবক-যুবতী, গৃহবধূসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এ আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাদের একটি বড় অংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ফলে দেখা যাচ্ছে ছাত্রী, গৃহবধূ ও কম শিক্ষিত নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। বয়স্ক নারীরাও আত্মহত্যা করছেন। তবে তাদের সংখ্যা খুব কম।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রেমে প্রতারিত ও ব্যর্থ হওয়া, অভিভাবকদের বকাঝকা, পরীক্ষায় ফেল করা কিংবা আশানুরূপ ফল না হওয়া কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। আর গৃহবধূরা পারিবারিক সমস্যা-সহিংসতা, দাম্পত্য কলহ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে বেশি আত্মহত্যা করেন। আর এ আত্মহত্যার জন্য তারা কীটনাশক, ঘুমের ট্যাবলেট, ইঁদুর মারার বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট উপাদান হিসেবে ব্যবহার করছেন। এছাড়াও গলায় রশি, ওড়না অথবা শাড়ি ব্যবহার করেও আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।

বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এ বছর জুন মাসে এ উপজেলার বিভিন্ন বয়সের ১৬ জন বিষপান ও গলায় ফাঁস দিয়ে অসুস্থ হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল ও রাজশাহী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে গলায় ফাঁস দিয়ে অসুস্থ এক জনের বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই মৃত্যু হয়।

অপরদিকে বাগাতিপাড়া মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, গত জুন মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করে নিজ বাড়িতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে ।এছাড়া বিষক্রিয়ায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক জনের মৃত্যু হওয়ায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। এনিয়ে ওই মাসে থানায় তিনটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ।

দিঘা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল আলম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা, অশান্তি ও বিষন্নতার জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে তা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।
স/শ