বাগমারায় বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত, বিপর্যস্ত জনজীবন

বাগমারা প্রতিনিধি:

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে রাজশাহীর বাগমারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি ই্উনিয়নের বাড়ি-ঘর ও নিম্নাঞ্চলের ফসল তলিয়ে গেছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

গতকাল বুধবার (১৬জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পীরগঞ্জ বাজার থেকে মীরপুর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের দ্বীপপুর ইউনিয়নের লাউবাড়িয়া নামক স্থানে  প্রায় দুইশ ফিট এলাকা জুড়ে ধ্বসে যায়। এতে উপজেলার কাচারী কোয়ালিপাড়া ও দ্বীপপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ফলে বাড়িঘর, পানবরজ, কলা বাগানসহ বিভিন্নি ফসলাদি তলিয়ে যায়।

এদিকে, পাউবোর ওই বাঁধ ভেঙ্গে লিকরার বিলে পানি প্রবেশ করে সেখান থেকে বিল সনি বিল হয়ে কাচারী কোয়ালিপাড়া ইউনিয়নের নাক কাটি বিলসহ কয়েকটি পয়েন্টে পানি ঢুকে যায়।ফলে দ্বীপপুর ইউনিয়নের জোলাপাড়া হয়ে লাউ বাড়িয়ার বাঁধ ভেঙ্গে পানির প্রবল গতিবেগে ঢেঁকরতলা বাঁধ তলিয়ে গিয়ে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।

অপরদিকে, বুধবার বিকেলে পার্শ্ববতি মান্দা উপজেলার জোঁকা হাট কয়লা বাড়ি এলাকায় একটি বাঁধ ভেঙ্গে আত্রাই নদীর পানি বাগমারার ভেতর প্রবেশ করে। এতে বারনই ও ফকিরনী নদীর পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। এতে করে উপজেলার এই দুই ইউনিয়ন ছাড়াও গোবিন্দপাড়া, সোনাডাঙ্গা, নরদাশ সহ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্জল প্লাবিত হয়েছে।

জানাযায়, প্রায় ত্রিশ বছর ধরে পাউবো’র পীরগঞ্জ-মীরপুর বাঁধের কোন সংস্কার করা না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে দ্বীপপুর ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের সড়ক।যা  মীরপুর, লাউপাড়া, পীরগঞ্জ, কাষ্টনাংলা, মোহনপুর, কাচারী কোয়ালীপাড়া, জাংগালপাড়াসহ দুই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র পথ বাঁধের ওই সড়ক পথ। সংস্কার না হওয়ায় লাউবাড়িয়ার পূর্ব থেকেই নালা হয়ে থাকা ওই স্থান ধ্বসে যায়।

লাউবাড়িয়া গ্রামের আবুবকর সিদ্দিক জানান, এই বাঁধ মজবুত থাকলে ধ্বসে যেত না। বন্যায় তার বাড়িসহ দুইটি পানবরজ তলিয়ে যায়। অনেকেই ঘরের আসবাবপত্র ও গৃহপালিত পশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

একই গ্রামের ভ্যান চালক আবুতালেব জানান, এই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তার রোজগার বন্ধহয়ে গেল। দ্বীপপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম, আফজাল হোসেন জানান, বন্যায় তাদের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের কালিকাপুরসহ কয়েকটি গ্রামেও বন্যার পানি প্রবেশ করে জন-জীবন দূর্বিসহ করে তুলেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সম্প্রতি পাউবো’র অর্ধ্ব কোটির বেশীটাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধটি পানিতে ভেঙ্গে যায়।

কালিকাপুর গ্রামের রাসেল আহমেদ জানান, পানি কমে না গেলে ঘরের মধ্যে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। এদিকে ওই ইউনিয়নের শিতলী-জাংগালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যায়।

এছাড়াও কাচারীকোয়ালী পাড়া ও দ্বীপপুর ইউনিয়নের তিনটি বিল ও প্রায় ত্রিশ পুকুরতলিয়ে গেলে কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানা যায়। আশে পাশের আরো কিছু গ্রাম প্লাবিত হবার আশংকা রয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারনা করছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আহম্মেদ জানান, বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে হঠাৎ বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার, নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ ও কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ রাজিবুর রহমান।

স/অ