বাগমারায় হত্যা মামলার আসামীকে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার ইফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর বগমারায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় সোহাগ হোসেন (২৬) নামে এক যুবককে নির্মম ভাবে খুন করা হয়। চাঞ্চল্যকর সোহাগ হোসেন হত্যা মামলার আসামী ঝিকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে পাশে নিয়ে ইফতার মাহফিল করলেন ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মহামান্য আদালতে দায়েরকৃত মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার না করে তাকে নিয়ে ইফতার করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মামলার বাদী।

শনিবার যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সোহাগ হত্যা মামলার ১ নং আসামী ঝিকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ওই ইফতার মাহফিলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন যোগীপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। ছবি দেখা যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নয়ন হোসেন এর ডানপাশে সোহাগ হত্যা মামলার আসামী চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বামপাশে বাগমারা থানার তদন্ত কর্মকর্তা সবুজ রানা এবং তাঁর বামপাশে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফা কামাল বসে আছে। মামলার পর থেকে এলাকায় অবস্থান করলেও অদৃশ্য কারনে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

মামলাসূত্রে জানা যায়, গত ২ ফেব্রæয়ারি সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে মনোহার ইসলাম তাদের জমিতে থাকা সরিষা তুলতে বিলে যায়। এ সময় একই গ্রামের বেশ কয়েকজন সংঘবদ্ধ ভাবে সেখানে উপস্থিত হয়। তারা মনোহারকে বলতে থাকে তুকে বিলের জমিতে আসতে নিষেধ করেছি তারপরও কেন সরিষা তুলতে এসেছিস। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাধে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মনোহারকে সরিষার জমিতেই সন্ত্রাসী কায়দায় বেধড়ক মারপিট করা হয়। সন্ত্রাসী হামলায় আহত মনোহারকে উদ্ধার করে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বন্ধুর উপরে সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে আহত মনোহার ইসলামের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় সোহাগ সহ তার বন্ধুরা।

আহত মনোহারের বাসায় পৌঁছার আগেই ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝিকরা ইউনিয়নের মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীর হামলার শিকার হয় সোহাগ সহ তার বন্ধুরা। ওই সকল সন্ত্রাসীর হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় সোহাগ। জানা গেছে, ঢাকার মালিবাগে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে গিয়ে বাগমারা উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনিসার রহমানের ছেলে মনোহার ইসলামের সাথে পরিচয় হয় সোহাগের। সমবয়সী হওয়ায় সেই পরিচয় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে রুপ নেয়। এসময় দুই জনেই ওই কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর প্রায়ই দুজনের মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হতো। সেই যোগাযোগ থেকে আহত বন্ধুকে দেখতে আসছিল সোহাগ সহ তার বন্ধুরা।

ওই ঘটনায় সোহাগের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম সাগর বাদী (গত ৩ ফেব্রæয়ারি) বাগমারা থানায় প্রথমে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। হত্যা কান্ডের পর থেকে এর সাথে জড়িতরা এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে হত্যা মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

নিহত সোহাগ যশোরের মনিরামপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম মিস্ত্রীর ছেলে। একমাত্র ছেলে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হওয়ার ঘটনায় মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পরে তিনি সুস্থ হয়ে বাগমারায় আসেন এবং হত্যা কান্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যারা জড়িত তাদের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত বেশ কয়েক জনের নামে রাজশাহীর আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। এক ঘটনায় দুটি মামলা হওয়ায় তদন্তের স্বার্থে আদালত তা আগের টার সাথে সমন্বয় করার নির্দেশ দেয়। এদিকে আসামীদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে তদন্ত কর্মকর্তা। সে কারনে আর আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে দাবী মামলার বাদীর।

মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আগেই আসামীকে সাথে নিয়ে ইফতারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার বাদী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তাদের সকলের বিচার চাই। আমার ছেলে কোন অপরাধ করেনি। কেন তাকে হত্যা করা হলো। আর আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও কেন তাদেরকে না ধরে সাথে নিয়ে ইফতার করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর নয়ন হোসেন বলেন, সোহাগ হত্যার ঘটনায় থানায় এবং আদালতে পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই ঘটনায় যেহেতু থানায় একটি মামলা আছে সেক্ষেত্রে পরে মামলা স্থগিত রেখে আগেরটার সাথে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। আমি বর্তমানে জয়পুর হাটের আক্কেলপুর থানায় ওসি হিসেবে বদলী হয়েছি। তাই মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা যিনি হবে তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। কোন অপরাধীকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। নতুন করে পুলিশ সুপার যাকে ওই মামলার তদন্ত ভার প্রদান করবেন তিনি তা দেখভাল করবেন।

স/আর