বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানবদেহে মেকানিক্যাল হার্ট প্রতিস্থাপন

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানবদেহে মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার (২ মার্চ) রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪২ বছর বয়সী এক নারীর মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন সম্পন্ন করেন প্রখ্যাত হার্ট সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা হলো। মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপনের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বিশেষ সংবাদ সম্মেলন করে কর্তৃপক্ষ।

পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির গতকাল বুধবার ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডে মেকানিক্যাল হার্ট বা লেফট ভেন্ট্রিকুলার এসিস্ট ডিভাইস (এল্ভ্যাড) স্থাপন করেন। যিনি দীর্ঘদিন শেষ পর্যায়ের বা তীব্র হার্ট ফেইলিওর নামক হৃদপিণ্ডের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এবং দেশে-বিদেশে নানা চিকিৎসার পরও তার হৃদপিণ্ড বা হার্ট প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ছিল।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উৎকর্ষতায় উন্নত বিশ্বে এর একমাত্র চিকিৎসা আরেকটি সুস্থ  হার্ট দিয়ে প্রায় অকার্যকর হার্টটি প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায় কিংবা পেতে দেরি হচ্ছে এবং হার্টের অবস্থা যদি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে তবে মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা এল্ভ্যাড স্থাপন করা হয়। এতে রোগীর হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং সমস্ত শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার ইত্যাদি সেরে ওঠার সুযোগ পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগী হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট এর উপযুক্ত না হলে তাদের জন্য একমাত্র বিকল্পএল্ভ্যাড, যা স্থাপনের মাধ্যমে বাকি জীবন সুস্থভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।

ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার দক্ষ সহকর্মীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় ধরে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে হার্টমেট-৩ নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট রোগীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন এবং তার পুরো হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। আশা করা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে এবং হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণগুলোর উন্নতি ঘটবে।

বাংলাদেশে হার্ট সার্জারির প্রথম সারির এ চিকিৎসক দল ইউনাইটেড হসপিটালের শুরু থেকেই পনের হাজারেরও বেশি মানুষের হার্টের সফল সার্জারি করেছেন এবং রোগী ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

উল্লেখ্য, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও হার্ট অ্যাটাক, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ, হার্ট ভাল্ভ জনিত সমস্যা, দীর্ঘমেয়ারি উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘমেয়াদি হার্টের অস্বাভাবিক রিদম বা অ্যারেদমিয়া ইত্যাদি নানান রোগের শেষ পরিণতি হচ্ছে ‌‘হার্ট ফেইলিওর’।

বর্তমানে সারা বিশ্বে দশ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই জটিল রোগে আক্রান্ত। এশিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ১.২৬% থেকে ৬.৭ %।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ