বাঁশখালীতে পাহাড়ি ঢলে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব ৩২ পরিবার

 

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাতে গ্রামের সবাই ঘুমিয়ে ছিল। ঠিক রাত সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে মাটির কাঁচা ঘরের দরজায় সজোরে ধাক্কা দিচ্ছিল ৪/৫ ফুট উঁচু হয়ে পাহাড়ি ঢলের তীব্র বেগ। অনেকেই মনে করেছে ডাকাত পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখে ডাকাত নয়, দরজা ভেঙেই পাহাড়ি ঢল ঘরের ভিতর ঢুকে পড়েছে। ঢলের প্রচণ্ড বেগ ঘরের একদিকে ঢুকে অপর দিকে বের হয়ে যাচ্ছিল। এর সাথে সাথে মাটির ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ছিল আর ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেসে নিয়ে যাচ্ছিল। প্রাণ বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের হয়ে ছুটাছুটি। বসতভিটা, রাস্তাঘাট, পুকুর সর্বত্র ৫/৬ ফুট পানির নিচে ডুবা। এক বিভীষিকাময় অবস্থা।

সোমবার (৯আগস্ট) ভোর হতে না হতে সহায় সম্বল ঘর-বাড়ি হারিয়ে মানুষের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিল। যা সম্বল ছিল তা বাঁচানোর লড়াই করছিল। ততক্ষণে পাহাড়ি ঢলের বেগ কিছুটা কমেছে। গতকাল রবিবার মধ্যরাতে বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের পাইরাং গ্রামের ঘটনা এটি।

বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ঘর-বাড়ি সহায় সম্বল হারানো মানুষগুলোর কথা শুনেছি এবং দেখেছি। তাদেরকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে। পাহাড়ি ঢলে পাইরাং গ্রামে ভয়ংকর ক্ষতি হয়েছে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, পাইরাং গ্রামের চাটিয়া পাড়া ও হিন্দু পাড়ায় ৩২টি ঘর-বাড়ি পাহাড়ি ঢলের তাণ্ডবে ভেঙে গেছে। কিছু কিছু মাটির ঘর খাড়া দেখালেও প্রতিটি ঘরের দেয়ালে ফাটল দিয়ে হেলে আছে। ওখানে কেউ বসবাস করলে যেকোনো মুহূর্তে প্রাণহানি হবে। অনেকের ঘরের ভিতর ১ থেকে দেড় ফুট পলি কাদা জমে আছে। ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিবেশীদের আশ্রয়ে আছে।

চাটিয়া পাড়ার কৃষক আব্দুর ছালাম ও তার স্ত্রী ছাফিয়া খাতুন নিজের স্বপ্নের ঘর হারিয়ে বাড়ির উঠানে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা জানান, রাত সাড়ে ৩টায় পাহাড়ি ঢল সজোরে ধাক্কা দিয়েই দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে। মনে করেছিলাম ডাকাত, পরে দেখি পানি। গজব নেমেছে মনে করে অন্য দরজা দিয়ে পালিয়ে আমরা বাঁচি।

বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা ইমরুল হক চৌধুরী ফাহিম বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে পাইরাং গ্রামে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। কালভার্ট ও রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিকভাবে খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।

 

সূত্র: কালের কন্ঠ