বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন: শুধুই বিকল্প প্রস্তাব

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল দু’বছর আগে। এরপর দফায় দফায় সভা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কোম্পানি আর গঠন হচ্ছে না। বর্জ্যে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে নগরী। সবাই এই বর্জ্যকে মূল্যবান সম্পদ বলে দাবি করলেও কোনও কাজে আসছে না।

জানা গেছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি গঠন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে আরও কয়েকটি সভা হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ‘ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি’ নামে আলাদা একটি কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী কোম্পানিটি গঠন হওয়ার কথা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পিডিবি, ডিপিডিসি এবং ডেসকোর সমন্বয়ে। কোম্পানির মালিকানায় থাকবে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, সাভার পৌরসভা ও কালিয়াকৈর পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত থাকবে এই কার্যক্রমে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমিন বাজার ও মাতুয়াইলের ডাম্পিং স্টেশনের জমি ব্যবহার করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবে সিটি করপোরেশন। ডিপিডিসি ও ডেসকো থাকবে বিদ্যুৎ কেনা ও সঞ্চালনের দায়িত্বে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে পিডিবি। কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকবেন বিদ্যুৎ সচিব অথবা স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত কোম্পানির খসড়া চূড়ান্তকরণ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করেছেন। এরপর সর্বশেষ সভা হয় গত ১০ নভেম্বর। সভায় সংশ্লিষ্টরা যোগদান করলেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সিটি করপোরেশনগুলো দ্রুত এগিয়ে আসছে না। তারা নিজেরাই বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরি করতে চায়। এ কারণে পিডিবির অধীনে কেরানীগঞ্জে একটি প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ১১ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ইউনিয়ন যুবলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। কেরানীগঞ্জে এ প্রকল্প সফল হলে সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় এ ধরনের প্রকল্প চালু করা হবে।’

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এমকে বখতিয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জাপান, কোরিয়া ও চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছি। এগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।’

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। আর কোরবানির ঈদের দিন উৎপাদন হয় আরও অন্তত পাঁচ হাজার টন বর্জ্য। বিশাল পরিমাণের এই বর্জ্য নিয়ে ফেলা হয় আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনে। ডাম্পিং স্টেশন দু’টির কারণে আশপাশের এলাকায় দূষিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ঢাকার এই বর্জ্য দিয়ে অন্তত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

জানা গেছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইতালির ‘দ্য ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্সের’ (এসবিএল)চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হয়নি।

সূত্র : বাংলাট্রিবিউন