বরাদ্দ থাকলেও নেই উন্নয়ন, কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে শংসয়

রেদওয়ান বিজয়, রাবি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কাছ থেকে পাওয়া প্রকল্পের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি ছাড়াই এক বছর শেষ হতে চলছে। চার বছর মেয়াদে পাওয়া ৩৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার এই উন্নয়নকল্পের একশ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা হয়েছে এ বছরের শুরুর দিকে।

নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ বাস্তবায়ন না হলে নিয়ম অনুযায়ী এ টাকা আবার ফেরত নেবে একনেক। টাকা পাওয়ার পরও কোন কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এত বড় প্রকল্পের সিকিভাগও বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আবাসিক সমস্যা সমাধানের জন্য দশতলা বিশিষ্ট দুটি হল ও শিক্ষকদের জন্য আবাসিক ভবন, বিশতলা একাডেমিক ভবন, চারতলা স্কুল নির্মাণ এবং পুরাতন ভবনগুলো সংস্কারের জন্য ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে একটি প্রকল্প পাঠায় রাবি প্রশাসন। যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় এক বছর পর ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর একনেক চার বছর মেয়াদে ৩৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার অনুমোদন দেয়।

একনেক’র পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করার জন্য এ বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একশ কোটি টাকা দেওয়া হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য ছিলেন চৌধুরি সারওয়ার জাহান। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম, চারুকলা, কৃষি অনুষদ ও চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্ল্যানিং কমিটিকে নির্দেশ দেন। এর পরপরই উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়।

জানা গেছে, প্রথম বছরের কাজের অবস্থা ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে পরের বছরের জন্য আবার একশ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এভাবে চার বছরে এ টাকা পাবে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তহবিলের টাকা তহবিলেই পড়ে আছে। সেই টাকায় এখনও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না হলেও এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যাবে। তবে সেটি খুব দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। একনেকের টাকায় প্রকল্পের কাজগুলো যথাসময়ে শেষ করতে পারলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে আরও কিছু অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও জানান প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র অধ্যাপকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি কাজগুলো একটু সময় সাপেক্ষ। অনেক সময় দুই তলা ভবন নির্মাণ করতেই অনেকটা সময় লেগে যায়। এই প্রকল্পের আওতায় দশতলা ও বিশতলা বিশিষ্ট তিনটি ভবনসহ আরও বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ এখনও শুরু হয়নি। দ্রুত কাজ শুরু না করলে বাকি তিন বছরে এত বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘আমরা টাকা পাওয়ার পরেই কাজ শুরুর পরিকল্পনা হাতে নেই। এর কয়েকদিন পরেই আমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে এখনও প্রকল্পের দৃশ্যত কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। কাজ শেষ না হলে এই টাকা ফেরত নেবে একনেক। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য খুব দ্রুত কাজ শুরু করা বাঞ্ছনীয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং কমিটিকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তারাই দেখভাল করছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আফসার আলী জানান, ‘দশটা কাজের মধ্যে আমরা মোট পাঁচটা কাজ হাতে নিয়েছি। এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। মিলনায়তনের সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য ইলেক্ট্রনিক টেন্ডারিং চলছে। টেন্ডার শেষ হলে যারা কাজ পাবে তাদেরকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হবে। আর বেশ কয়েক মাস আমাদের কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য ছিল। তাই কাজ শুরু করতে একটু সময় লাগছে।’

স/বি