বাঘা প্রতিনিধি :
রাজশাহীর বাঘায় গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির ফলে ডুবে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জমির ফসল সহ প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ১১ টি বিদ্যালয়ের তিন হাজার শিক্ষার্থীর পড়ালেখা। আবার অনেকের রাতের ঘুম হারাম হচ্ছে সাপের ভয়ে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার অভাবে অনেকেই অনাহারে-অধ্যহারে দিন কাটাচ্ছেন। শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে ত্রান বিতরণ করতে গিয়ে ভুক্তভুগীদের মুখ থেকে এসব করুন তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিন পদ্মার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, এই মুহুর্তে যাতাযাতের জন্য তাদের এক মাত্র বাহন টিনের তৈরী ডুংগা। নদীতে পানি বাড়ার পর থেকে চরাঞ্চলের চকরাজাপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, দিয়ার কাদিরপুর, লক্ষীনগর, মানিকের চর এবং টিকটিকি পাড়া-সহ ১৫টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তারা বাড়ি থেকে ঠিকমত বের হতে পারছে না। এ সব কারনে বন্ধ হয়ে গেছে ওই অঞ্চলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার অনেকের হালের বলদ দাড়িয়ে আছে খড়ের উপরে।
ক্রমাগত পানি বাড়ার ফলে সেখানে অসংখ্য জমির আখ, পাট ও চলতি আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সাথে পদ্মার স্রোতে ব্লকসহ বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হতে যাচ্ছে। আবার কোন কোন স্থানে বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন বাঁধ ভাঙ্গার ফলে এলাকায় এক প্রকার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনিতেই ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে লোকজন দিশেহারা অন্যদিকে বাঁধের ভাঙ্গনের কারণে তারা নিজেদের বাড়ি-ঘর রক্ষা করতে পারবে কিনা এ নিয়েও দু:শ্চিন্তায় রাত কাটাচ্ছেন।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা আলিম মোল¬া সিল্কসিটিনিউজকে জানান, পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে তলিয়ে গেছে তার নয় বিঘা জমির ফসল। এ ছাড়াও ক্রমাগত স্রোতে ভেঙ্গে পড়েছে ১০ টি আমগাছ। অপর একজন আব্দুর রহমান জানান, নদীতে পানি বাড়ার পর তারা গত প্রায় ৮/১০ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর ফলে তাদের গরু-ছাগল সহ অন্যান্য জিনিষ পত্র ঘরে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরে খাবার নেই। তারা এখন পর্যন্ত সরকারী যে সহায়তা পেয়েছে তা প্রয়জনের তুলনায় একে বারেই অপ্রতুল বলে তিনি জানান।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিযুল আযম জানান, নদীতে পানি বাড়ার পর ফসল তলিয়ে যাওয়াতে লোকজনের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয়। কিন্তু যাদের বাড়ি ভেঙ্গে অন্যত্র সরাতে হচ্ছে তারা অর্থিক ভাবে চরম সংকোটে রয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত টিন এবং নগদ টাকা দিয়ে ওদের পাশে দাড়ানোর।
চরাঞ্চলের দিয়ারকাদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা আঞ্জুয়ারা জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির কারনে এখন তারা নির্ঘম রাত কাটাচ্ছেন। এর প্রধান কারণ সাপের উপদ্রব। তিনি গত দুইদিন গোখরা এবং দাড়াস মিলে ৪ টি সাপ মেরেছেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম জানান, বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভয়াবহ। তিনি গত দু’সপ্তাহে স্থানীয় এমপি বর্তমান সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহদয় সহ উপজেলা প্রশাসন এবং গুঠি কয়েক এনজিও কর্মীদের সহায়তায় সর্বশেষ শনিবার পর্যন্ত নগদ ৯০ হাজার টাকাসহ চারবার ত্রান বিতরণ করেছেন। তিনি ওই অঞ্চলের মানুষের দু:খ-দুরদশার কথা স্থানীয় জেলা প্রশাসক মহদয়কেও অবহিত করেছেন বলে জানান।
শনিবার ত্রান বিতরণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলামের সাথে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, স্থানীয় চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিযুল আজম, বাঘা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, বাঘা উপজেলা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি আমানুল হক আমান,এনজিও প্রতিনিধি আবুবক্কর সিদ্দিক, শাজাহান আলী, আসাদুজ্জামান, সেলিম রেজা ও উৎপল।
স/শ