‘বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭৩’র এ্যাক্টের ফাঁকফোঁকর খুঁজছেন রাবির রুটিন উপাচার্য’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) পরিচালিত। এই এ্যাক্ট’র ফাঁকফোঁকর নিয়ে বিএনপি-জামায়াত তথা স্বাধীনতাবিরোধীরা কথা বলতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রুটিন উপাচার্য (বর্তমান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম জাতির পিতার হাতেগড়া ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট’র ফাঁকফোঁকর খুজছেন।’

‘এডহক’ নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৮ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি সোমবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে তাদের পদায়নের দাবিতে রুটিন উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। এসময় ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট নিয়ে রুটিন উপাচার্য কথা বলায় ‘এডহক’ নিয়োগপ্রাপ্তরা এর প্রতিবাদ জানায় এবং উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৬ মে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট’র ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৩৮ জনকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি পদে ‘এডহক’ এ ৬ মাসের জন্য নিয়োগ প্রদান করেন। কিন্তু নিয়োগ প্রদানের প্রায় সাড়ে ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এই ১৩৮ জন তাদের কর্মে যোগদান করতে পারেননি। কর্মে যোগদানের দাবিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। সর্বশেষ গত ২ আগস্ট পদায়নের দাবিতে বর্তমান রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলামের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠায় ‘এডহক’ নিয়োগপ্রাপ্তরা। শিক্ষামন্ত্রী বরাবর তাদের (নিয়োগপ্রাপ্তদের) পাঠানো স্মারকলিপির ফলোআপ জানতে সোমবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রুটিন উপাচার্যের সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাত করতে যান তারা। এসময় নিয়োগপ্রাপ্তরা রুটিন উপাচার্যের নিকট ১৯৭৩’র এ্যাক্ট এর মাধ্যমে অর্পিত ক্ষমতাবলে তৎকালীন উপাচার্যের দেয়া নিয়োগদাশেদের ওপর যোগদানে স্থগিতাদেশের কারণ জানতে চান। রুটিন উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্য করে ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট নিয়ে কথা বলেন।

এসময় নিয়োগপ্রাপ্তরা রুটিন উপাচার্যকে বলেন, ‘জাতির পিতার এ্যাক্ট এর মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত। ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট’র ফাঁকফোঁকর নিয়ে কথা বলে বিএনপি-জামায়াতরা। আপনি (রুটিন উপাচার্য) ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট’র ফাঁকফোঁকর নিয়ে কথা বলতে পারেন না।’ এই নিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে রুটিন উপাচার্যের বেশ উচ্চবাচ্য হয়। এক পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘রাজাকারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’ স্লোগান দিতে দিতে রুটিন উপাচার্যের কক্ষ থেকে চলে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যায়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নিয়ে সোমবারের কর্মসূচি শেষ করে।

এসময় চাররিপ্রাপ্তদের অন্যতম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন বলেন, ‘আমরা গত ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে এডহক এ নিয়োগ পাই। কিন্তু এর দুই দিন পর গত ৮ মে তৎকালীন রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা নিজের ইচ্ছেমত (সরকার তথা শিক্ষামন্ত্রণালয় নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা না দিলেও) আমাদের পদায়ন স্থগিত করে রাখেন। সম্পূর্ণ আইন-বহির্ভুতভাবে দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস ধরে আমাদের এই পদায়ন স্থগিত করে রাখা হয়েছে। আমরা মূলত এই বিষয়টি নিয়েই বর্তমান রুটিন উপাচার্যের সঙ্গে আজ কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া ১৯৭৩ এর এ্যাক্ট’র ফাঁকফোঁকর নিয়ে কথা বলেছেন। যেই এ্যাক্ট দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়, সেই এ্যাক্টের ফাঁকফোঁকর নিয়ে তিনি (রুটিন উপাচার্য) কথা বলতে পারেন না। এজন্য আমরা আর কথা না বাড়িয়ে তাঁর দপ্তর থেকে চলে আসি।’

এ বিষয়ে রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘৭৩’র এ্যাক্ট অমান্য করেছে কে? করলে ওরাই করেছে। ৭৩’র এ্যাক্ট আমরা অমান্য করার কথা বলবো কেন? আমরা চাই- তাদের নিয়োগে ৭৩’র এ্যাক্ট পূর্ণভাবে প্রয়োগ করা হোক। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার মন্ত্রণালয় যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেটার প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এরপর যা সুপারিশ করা হয় সেটা মেনে নিলে ৭৩ এর অ্যাক্ট ও বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হবে।’

এএইচ/এস