বগুড়ায় ভাসমান হাসপাতালে বানভাসিদের চিকিৎসা

চিকিৎসকের ফি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে ওষুধ পর্যন্ত খরচ মাত্র তিন টাকা। মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেয়ার কাজে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে নৌ অ্যাম্বুলেন্স। সব সময় খোলা থাকে জরুরি বিভাগ। চিকিৎসার জন্য হাজার টাকা খরচ করে আর শহরে যেতে হচ্ছে না। বানভাসিদের ঘরের দুয়ারে মিলছে চিকিৎসা পরিষেবা। বন্যায় বিশেষ সেবার পাশাপাশি শুস্ক মৌসুমেও বগুড়ার চরাঞ্চলে অবহেলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র পাল্টে দিয়েছে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ভাসমান হাসপাতাল।

যমুনার বুকে ভাসমান হাসপাতাল খ্যাত জল জাহাজটি তিন মাস আগে সারিয়াকান্দির বোহাইল চরে নোঙর করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। শুধু চরাঞ্চলের মানুষই নয়। বিভিন্ন স্থান থেকে সব শ্রেণির মানুষরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নৌকাযোগে এ হাসপাতালে আসছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

হাসপাতালে চোখ অপারেশন, লেন্স স্থাপন, দন্ত, অর্থোপেডিক অপারেশন, গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, শিশু চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা ও স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ, ঠোঁট কাটা অপারেশন, স্ত্রীরোগের চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, নাক, কান, গলার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডিজিটাল এক্স-রে, ইসিজিসহ সবধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারি সংগঠন ফ্রেন্ডশিপ ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড যৌথভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইউনিলিভার।

উপজেলার কালাইহাটা চরের আব্দুল ছালাম বলেন, চোখে সমস্যা নিয়ে এ হাসপাতালে এসেছি। এখানে অল্প টাকায় চিকিৎসা পাচ্ছি। যা অন্য কোনো হাসপাতালে গেলে অনেক টাকা লাগত। এ ধরনের হাসপাতাল আগে দেখিনি। হাসপাতাল খুঁজতে হয় না হাসপাতালই রোগীদের দুয়ারে পৌঁচ্ছে যাচ্ছে।

উপজেলার কোমরপুর চরের নাছিমা বেগম বলেন, হামরা গরিব মানুষ। ম্যাল্যা দিন অসুকোত ভুগচি। ভালো ডাক্তারের কাচে যে যামো, ট্যাকা পামো কোনটে। টাউনোত যাতে অনেক ট্যাকা নাগে। দুই ব্যালা খাবার পাইন্যা, ট্যাকা জোগাড় করমো ক্যামন করি। বাড়ির কাচে জাহাজ আসি ভালো হচে। বড় ডাক্তারোক দ্যাকেয়া হামারগরে ম্যালা অসুক ভালো হচে।

বোহাইল গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, হামরা জীবনে বড় ডাক্তারের কাচে যাবার পাইন্যাই। অসুক হলে ফকির-কবর্যাজের পানি পড়া খাচি। জাহাজের ডাক্তারের কাচে অপরাশোন করি হামার চোক ভালো হচে। গাঁওয়োত জাহাজকোনা না আইলে চোকের অসুক থ্যাকি গ্যালো হনি।

উপজেলার বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, এসব চর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এ জন্য অনেকেই অকালে মারা যান। এ বাস্তবতায় লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল মানুষের ভীষণ উপকারে এসেছে। যারা যোগাযোগ সমস্যা ও অর্থাভাবে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেননি, তারা এখন হাতের কাছেই আধুনিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। হাসপাতালটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ভাসমান হাসপাতালের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (স্বাস্থ্য) ডা. সাইফুল আজিম জানান, চরের মানুষ আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। চরাঞ্চলে কোনো ওষুধের দোকান পর্যন্ত নেই। তাই চরবাসীর চিকিৎসাসেবার মূল লক্ষ্যেই আমাদের এই কার্যক্রম পরিচালিত। ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল চরাঞ্চলের মানুষকে হাতের কাছে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিয়েছে।

লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, ফ্রেন্ডশিপ একটি অর্গানাইজেশন ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। আমারা এক জায়গায় তিন চার মাসের বেশি থাকি না। চর এলাকার দুস্থ, দারিদ্র, গরিব ও অসহায়দের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া মূলত আমাদের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫০ জনের অধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ