বগুড়ায় কিস্তির চাপে এক পরিবারের তিনজনের আত্মহত্যার চেষ্টা, অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু

করোনাকালে সংসার চালাতে একাধিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছিলেন বগুড়ার মহিদুল ইসলাম (২৬)। সেই টাকা দিয়ে একটি মুদিদোকান দেন তিনি। কিন্তু তাতেও সংসারের চাকা তো ঘোরেইনি, উল্টো ক্ষুদ্রঋণের কিস্তির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হয়েছেন তিনি।

অবশেষে কিস্তির টাকা থেকে বাঁচতে একমাত্র শিশুকন্যা (৫) ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। মহিদুল ও তাঁর শিশুকন্যা মুমূর্ষু অবস্থায় এখন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর তাঁর তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বুলবুলি বেগম (২৩) আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়া সদর উপজেলার নওদাবগা গ্রামে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় একই পরিবারের তিনজনের এই আত্মহত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। পরে প্রতিবেশীরা টের পেয়ে রাতেই তাঁদের তিনজনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে আজ বিকেলে অন্তঃসত্ত্বা বুলবুলি বেগম মারা গেছেন। তাঁর স্বামী মহিদুল ও শিশুকন্যা মেঘনা এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, মহিদুল ও তাঁর স্ত্রী-কন্যা ছাড়া তাঁদের বাড়িতে অন্য কেউ ছিলেন না। ঘটনা তদন্তে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানান, মহিদুল একসঙ্গে ছয়-সাতটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তি শোধ দিতে না পেরে তাঁর স্ত্রী-কন্যাসহ তিনজন বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হতদরিদ্র মহিদুল ইসলাম কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। করোনায় কর্মহীন হলে একসঙ্গে কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে মুদিদোকান দেন তিনি। কিন্তু দোকানের বেচাবিক্রি ঠিকমতো না হওয়ায় ঋণের কিস্তি দিতে পারছিলেন না। এতে এনজিও থেকে কিস্তির চাপ বাড়তে থাকে। মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে মহিদুল তাঁর তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বুলবুলি বেগম ও একমাত্র শিশুকন্যা মেঘনাকে সঙ্গে নিয়ে বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

মহিদুল ইসলামের মা মর্জিনা বেগম বলেন, কয়েকটি এনজিও থেকে একসঙ্গে মোটা অঙ্কের ঋণ নেন তাঁর ছেলে। শোধ দিতে না পারায় এনজিওর লোকজন প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকেন। চাপ সইতে না পেরে মহিদুল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী-সন্তানসহ বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আবদুল আজিজ মণ্ডল আজ রাতে জানান, বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মহিদুলের তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বুলবুলি মারা গেছেন। মহিদুল ও তাঁর শিশুকন্যা এখনো সংকটাপন্ন।

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বেলাল হোসেন নামের (২৮) এক ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি কিস্তির চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে।

প্রথম আলো