রাজশাহীতে আট বছরের শিশুর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, প্রতিকার চান বাবা

আট বছরের শিশুর বিরুদ্ধে রাজশাহীর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দোকান খোলা রাখার অভিযোগে অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক শিশুসহ বাবার নামে শ্রম আদালতে মামলাটি করেছিলেন।

ভুক্তভোগী শিশুটির নাম জুবাইর আহমেদ। তার বাবার নাম জুনাব আলী মণ্ডল। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকায়। জুবাইর স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। নওহাটা পৌর বাজারে জুনাব আলীর একটি জুতার দোকান রয়েছে।

জুনাব আলীর আইনজীবী এম আলম জামান রাসেল আজ বুধবার জানান, মামলাটির বাদী ছিলেন রাজশাহীর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক বাবুল আক্তার। তিনি মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে লিখিত আবেদন জানালে শ্রম আদালত রাজশাহীর চেয়ারম্যান (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) গোলক চন্দ্র বিশ্বাস গতকাল মঙ্গলবার তা মঞ্জুর করেন।

জুনাব আলী জানান, গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় পবা থানার একজন কনস্টেবল তাঁর হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দেন। তিনি খাম খুলে দেখেন, তার মধ্যে রাজশাহীর শ্রম আদালতের দুটি সমন। একটি তাঁর নিজের নামে, অপরটি তাঁর ছেলে জুবাইর আহমেদের নামে। আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, যেকোনো সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (তাঁর এলাকায় শুক্রবার) নাকি তাঁর দোকান খোলা ছিল। তাতেই শ্রম আইনে অপরাধ হয়েছে।

জুনাব আলী দাবি করেন, তিনি কোনো শুক্রবারেই তাঁর দোকান খোলা রাখেন না। দোকান খোলা অবস্থায় কোনো দিনই তাঁর শ্রম আদালতের কোনো পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা হয়নি। শখ করে দোকানের সাইনবোর্ডে ছেলের ছবি দিয়েছিলেন। ছবির নিচে ছেলের নামও লিখে দিয়েছিলেন। মামলার বাদী শুধু সাইনবোর্ডের নাম দেখে মামলা দিয়েছেন। এ বিষয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আট বছরের শিশু মামলার আসামি, দিতে হয় হাজিরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

জুনাব আলী বলেন, ‘আইনজীবী আমার পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স ও ছবি নিয়ে আদালতে যেতে বলেছেন। আগামী মঙ্গলবার যাব। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবীরও আমার সঙ্গে যাওয়ার কথা। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আমার ছেলের মানসিক ক্ষতি হয়েছে। আমিও হয়রানির শিকার হয়েছি। এর প্রতিকার চাই।’

মামলার বাদী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের পরিদর্শক বাবুল আক্তার শিশুকে মামলার আসামি করার ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের লোকবল নেই। নিরাপত্তার অভাবে আমি ওই এলাকায় যেতে পারেনি। এ জন্য যাচাই করতে পারিনি যে কে শিশু আর কে বড়। সাইনবোর্ডে যার নাম পেয়েছি, তার নামেই মামলা করেছি।’

এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য জুনাব আলীকে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। তিনি তা করেননি। মানবিক কারণে তাঁরা মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ নিয়ে তাঁর বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।

প্রথম আলো