বগুড়ায় করোনায় আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু, জেলায় আক্রন্ত ৯ হাজার ৪৪২

বগুড়ায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। ওই চিকিৎসকের নাম গাজী শফিকুল আলম চৌধুরী (৭৭)।

গতকাল শনিবার রাতে তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গাজী শফিকুল আলম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি গাবতলী উপজেলার দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের উজগ্রাম চৌধুরীপাড়ায়। পৈতৃক সূত্রে তিনি বগুড়া শহরের সূত্রাপুর ঈদগাহ মাঠ লেনে বসবাস করতেন।

প্রায় ৪৭ বছর ধরে লন্ডনে চিকিৎসা পেশায় জড়িত ছিলেন গাজী শফিকুল আলম। ২০০৬ সালে দেশে ফিরে তিনি বগুড়া শহরে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। গাজী রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে গাজী সজল চৌধুরী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।

গাজী শফিকুল আলমের ছোট ভাই ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক উপপরিচালক গাজী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তাঁর ভাই বিদেশ থেকে ফিরে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় জেলখানা সড়কে গাজী ভবনের অফিসে বসতেন। চলতি মাসের প্রথম দিকে তিনি প্রথমে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ৪ ডিসেম্বর করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৫ ডিসেম্বর তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।

রোববার বাদ জোহর বগুড়া শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এবং বাদ আসর গাবতলী উপজেলার উজগ্রাম চৌধুরী পাড়ায় জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আটজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ ও করোনা ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক এ কে এম মাসুদুর রহমান (৬০)। তাঁর বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায়। ৮ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের সাবেক পরিচালক এবং বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক উপপরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী (৬১)। তাঁর বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায়।

২ সেপ্টেম্বর বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বি এম ফারুক (৬৭)। তিনি বগুড়া শহরের খান্দার এলাকার গোহাইল সড়কের বাসিন্দা এবং রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রভাষক ছিলেন। ৮ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানুল বারী শামীম (৪৯)। তাঁর বাড়ি বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ায়। ৬ আগস্ট করোনায় মারা যান স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (অলটারনেট মেডিসিন) মো. আবদুল লতিফ (৫৮)। তাঁর বাড়ি শহরের মালতিনগর এলাকায়। ১৪ জুলাই করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও গাইনি বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক শামস শায়লা বানু। ৪ জুন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয় বগুড়া শহরের সূত্রাপুরের বাসিন্দা ও রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের (৯২)।
২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু

কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া জেলার তিন হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দুপুর ১২টা থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসক, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তাসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫৩। অন্যদিকে রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৪৪২ জন।

চিকিৎসক গাজী শফিকুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়াও রোববার সকালের দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনায় মারা গেছেন শহরতলি ফুলদীঘি এলাকার মোস্তাফিজার রহমান (৬৬)। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, ১৭ ডিসেম্বর থেকে করোনায় আক্রান্ত ওই রোগী প্রথমে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো করা হয়। রাত দেড়টায় ওই রোগীকে ভর্তি করার পর তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে আসে। এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকায় স্বজনেরা মোস্তাফিজার রহমানকে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভোরের দিকে মারা যান।

অন্যদিকে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, শনিবার বেলা দেড়টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় মারা গেছেন অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বগুড়া শহরের নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান (৬৬)। তিনি ১৭ ডিসেম্বর করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। নমুনা সংগ্রহ করে মেডিকেল কলেজের আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর পর ১৮ ডিসেম্বর তিনি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। ওই দিনই তিনি মারা যান।

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পাল্লা দিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৪৪২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৫৩৩ জন। চিকিৎসাধীন ৬৮৯ জন। বর্তমানে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৬, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২৬ এবং টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে ২৭ জন চিকিৎসাধীন। মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৪৭৬ জন। অন্যদিকে বাসায় আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৯৬৬ জন।

প্রথম আলো