শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতি

বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের তিন কর্মচারী আটক

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :messenger sharing button

বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ভর্তি জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে আটক করে র‌্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্প। আরেকজনকে আটক করে শাজাহানপুর থানাধীন কৈগাড়ী পুলিশ।

শনিবার বিকেলে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তাদের নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এদিন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল প্রতারণার বিষয়টি তদন্তের জন্য শাহ সুলতান কলেজে আসেন।

আটকরা হলেন, আমিনুল ইসলাম, হারুনুর রশিদ ও আব্দুল হান্নান। সবাই শাহ সুলতান কলেজের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত। আমিনুল ইসলাম ও হারুনকে র‌্যাব নিয়ে গেছে। আর আব্দুল হান্নানকে আটক করে পুলিশ।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের স্কোয়াড কমান্ডার নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে শাহ সুলতান কলেজে ভর্তি কার্যক্রমে প্রতারণার খবরটি জানা যায়। বিষয়টি জানার পর থেকে র‌্যাব খোঁজখবর নিয়ে তিনজনের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে। এজন্য তদন্তের জন্য শনিবার তাদের আটক করা হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার উচ্চমাধ্যমিক (এইসএসসি) পরীক্ষার দিতে না পেরে কয়েকজন শিক্ষার্থী শাহ সুলতান কলেজে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে ভর্তির নামে প্রতারণার ঘটনাটি উঠে আসে। কলেজে উপস্থিত চার শিক্ষার্থী দাবি করেন, অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে কলেজের কয়েকজন অফিস সহকারী। এদের মধ্যে হারুনুর রশিদকে সবাই মূল অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করেন।

কলেজের উপাধ্যাক্ষ মো. রেজাউন নবীও ভর্তি জালিয়াতির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। পরবর্তীতে ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল জলিলকে। অন্য দুই সদস্য হলেন- উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ও দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল করিম। তাদেরকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউন নবী।

উপাধ্যক্ষ বলেন, আমি ইতোপূর্বেও বলেছি আজকেও বলছি আমরা এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছি। আজকে রাজশাহী থেকে একটি টিম এসেছে। সম্মান তো চলে গেলে উদ্ধার করা যায় না। আমরা তদন্ত করে এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেব।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা চার সদস্যের একটি দল খবর পেয়ে কলেজে এসেছি। এখানে তদন্ত করে দেখছি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আরও তদন্ত করা হবে। আশা করা যায় আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।

গত বৃহস্পতিবার কলেজে রাশেদুল ইসলাম, মো. মিলন, শারমিন আক্তার ও উম্মে হাবিবা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, এসএসসি পরীক্ষায় পাসের পর সরকারি শাহ সুলতান কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুসারে তাদের সিরিয়াল আসে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তখন ভর্তির বিষয়ে জানতে শাহ সুলতান কলেজের অফিসে যোগাযোগ করেন। ওই সময় তাদের কথা হয় ওই কর্মচারীদের সঙ্গে।

কর্মচারীদের মধ্যে হারুনুর রশিদ শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে ভর্তি দেখান। শিক্ষার্থীদের ফি পরিশোধের রশিদসহ বিভিন্ন পরীক্ষার ফি নিতেন তিনি। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার সময় চলে এলে তাদের আর প্রবেশপত্র দিতে পারেননি হারুনুর রশিদ।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম ও মিলন জানান, আজকে তাদের কলেজে ডাকা হয়েছিল। তাদের কাছে পুরো ঘটনা তদন্ত কমিটির সদস্যরা শুনেছেন। সেই বক্তব্য লিখিতও নিয়েছেন।