শুক্রবার , ৫ জুলাই ২০২৪ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বগুড়ায় যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

Paris
জুলাই ৫, ২০২৪ ৪:২৯ অপরাহ্ণ

দীপক কুমার সরকার, বগুড়া:
বগুড়ার ব্যাপকভাবে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। এরফলে জেলার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এরফলে উপজেলা গুলোর নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল ও আবাদি জমি। নিরাপদে স্থানে আশ্রয় নেয়া সহ সরিয়ে নিচ্ছে ঘর-বাড়ি ও গৃহপালিত পশু। উচুঁ জায়গায় চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কর্মসুচি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির সিল্কসিটি নিউজকে জানান, সারিয়াকান্দিতে শুক্রবার (৫ জুলাই) সকলে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা ৪৯ সে.মি অতিক্রম করে। এদিন সকাল ৬টায় এ নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৭৪ মিটার। বিকেল ৩টায় পানির উচ্চতা হয় ১৬.৮১ মিটার, সবমিলিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। এই দুই উপজেলায় যমুনা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গত বুধবার রাতে ধুনটে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিনি জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দির চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি ও চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, পানি বৃদ্ধির শুরুতে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এখনও কোনো ঝুঁকি দেখা দেয়নি। যমুনার ছয়টি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর সেখানে এক হাজার ৭০০ মিটার ভেঙে ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ ওই এলাকা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে।

এদিকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৭৫টি গ্রামের ১১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ১১ হাজার ৯৭০টি পরিবারের ৪১ হাজার ৩৭০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফলে উপজেলার ৫৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৯০টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৫০টি কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় এ উপজেলার ৫৩০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৫০টি নলকূপ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দী হওয়ায় উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষরা তাদের বসতভিটার উঁচু জায়গার মাচা পেতে বসবাস করছেন, কেউবা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার বন্যায় আক্রান্ত এলাকাবাসী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা রান্না করতে না পারায় খাবার কষ্টে রয়েছেন এবং তাদের বসতভিটা ডুবে যাওয়ার কারণে তারা পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যায় ভুগছেন। এদিকে উপজেলার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়েছে, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণির কার্যক্রম অন্যত্র চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান বলেন, বন্যার জন্য এ উপজেলার মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। উপজেলার একটি মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে তার জন্য সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে, ৬টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

অপরদিকে ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় প্রবল স্রোতে ঘূর্ণাবর্তে বৃষ্টি হয়ে শহড়াবাড়ি বাঁধ (স্পার) ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এর প্রেক্ষিতে ১ জুলাই থেকে বাঁধটি রক্ষায় এই কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টায় ঝুঁকিপূর্ণ এই স্থানে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার বালু ভর্তি জিও বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে আরও আড়াই হাজার জিও বস্তা ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবলস্রোতের কারণে বাঁধের গোড়ালিতে বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাঁধের মাঝামাঝি স্থানে ধস দেখা দেয়। সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সাংসদ মজিবর রহমান মজনু ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বাঁধ রক্ষার ব্যবস্থা করেন।

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে নদীর কূল উপচে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বদিকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে।

পানিতে নিমজ্জিত বিদ্যালয়গুলো হলো, উপজেলার কৈয়াগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের প্রায় ৫’শ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের আশপাশে উঁচু বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় শহড়াবাড়ি স্পারটি (বাঁধ) নির্মাণের পর থেকে দফায় দফায় নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে। বর্তমানে বাঁধটির এক হাজার ২শ’ মিটার বাঁধের প্রায় এক হাজার মিটার অংশ টিকে আছে। বাঁধটি টিকে থাকার কারণে ভাটির দিকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। এদিকে বর্ষা মৌসুম এলেই শহড়াবাড়ি বাঁধটি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে বাঁধটি রক্ষায় আরও বালুভর্তি জিও বস্তার প্রয়োজন। পানি বেড়ে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে যমুনা নদীর কূল উপচে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বপাশে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, পুরো বাঁধ এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আপাতত ভাঙনের কোন শঙ্কা নেই। বালু ভর্তি জিও বস্তা ফেলে ঝুঁকিপূর্ণ শহড়াবাড়ি বাঁধটি টিকে রাখার চেষ্টা চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ধুনট, সাঁরিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। নদীপাড়ের মানুষের ক্ষতি রোধে সংশ্লিষ্টদে দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ মেট্রিকটন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবারের চাহিদা পেশ করা হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যে এই ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে যাবে।

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর