রাজধানী প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের কাছে হিজাব পরা দুই মুসলিম নারীকে ছুরিকাঘাত করেছেন দুই ফরাসি নারী। তারা ওই মুসলিম দুই নারীর হিজাব খুলে ফেলার চেষ্টা করেছে এবং বর্ণবাদমূলক গালিগালাজ করেছে।
সম্প্রতি শ্রেনিকক্ষে মহানবীর ব্যক্তিচিত্র দেখানোয় স্যামুয়েল প্যাটি নামে এক শিক্ষককে গত শুক্রবার গলা কেটে হত্যা করা হয়। হামলাকারী চেচেন বংশোদ্ভূত আব্দুল্লাখ আনজরভ পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনার পর ফ্রান্সে মসজিদে হামলা চালিয়েছে কিছু গোষ্ঠী, মুসলিম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সরকার। সহিংসতার হুমকির মুখে বিজিয়ার্স ও বর্ডিয়াক্স এলাকায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমরা এখন আতঙ্কে আছেন।
ফরাসি মুসলিম অধিকারকর্মী ইয়াসে লুয়াতি বলেন, ‘মুসলিমদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন তার নির্বাচনী প্রচারণা জোরদারে ইসলাম আতঙ্ককে ব্যবহার করছেন।’
সোমবার ফরাসি সরকার জানিয়েছে, সন্দেহভাজন চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, অভিযানের অংশ হিসেবে দুই শতাধিক মুসলিমকে দেশ থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সরকার ৫০টিরও বেশি মুসলিম সংস্থাকে টার্গেট করেছে। ‘চেইক ইয়াসিন কালেক্টিভ’ নামে একটি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার স্যামুয়েল প্যাটির নিন্দা করায় এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হাকিম সেফরিওইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ইসলাম আতঙ্কের বিরুদ্ধে কর্মরত সংগঠনও সরকারের নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে। কালেক্টিভ অ্যাগেইনস্ট ইসলামফোবিয়া ইন ফ্রান্সকে (সিসিআইএফ) নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার্ল্ড ডারমানিয়ান। এই সংগঠনটিকে ‘দেশের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের ব্যক্তিগত অনুরোধে সিসিআইএফসহ কয়েকটি সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন তিনি।
ডারমানিয়ানের মুসলিম বিদ্বেষ অবশ্য নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময় মুসলিমদের নিয়ে তার নেতিবাচক মন্তব্য রক্ষণশীল ও চরম ডানপন্থি দলগুলোর কাছে বেশ জনপ্রিয়।
মঙ্গলবার একটি টেলিভশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সুপারশপগুলোতে হালাল খাদ্য দেখে তিনি মর্মাহত। তার বিশ্বাস এর মাধ্যমে ফ্রান্সে বিচ্ছিন্নতাবাদকে লালন করা হচ্ছে।