ফল ধ্বংস করা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:  ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া মেনে ফলমূলে রাসায়নিকের উপস্থিতি পরীক্ষা করছে না বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, হাকিমের নির্দেশে যে হাজার হাজার মণ আম ও কলা ধ্বংস হচ্ছে তাতে শুধু জাতীয় ক্ষতিই হচ্ছে। বরং ফল পাঁকাতে কিছু রাসয়নিকের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বৈধ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

গত কয়েক বছরের মতো এবারও ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত মৌসুমী ফল আম, লিচু বা কলা পাকাতে ক্ষতিকর রাসয়নিক ব্যবহার হচ্ছে এমন অপরাধে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা এবং বিপুল পরিমাণ ফল ধ্বংস করছে। সম্প্রতি এ রমজানে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এমন অভিযান চালিয়ে নষ্ট করা হয় কয়েক হাজার মণ আম ও কলা।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগরের নির্বাহী হাকিম মশিউর রহমান বলেন, ‘এখন অধিকাংশ আমই অপরিপক্ব। অধিকাংশ আম কেটে দেখা যায়, ভিতরের আঁটিটি পর্যন্ত কেটে যাচ্ছে। এটা শক্ত না, একদম নরম। তার মানে, আমটা রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকানো হয়েছে।

তবে ফল পাকাতে রাসয়নিকের ব্যবহার নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে সরাসরি ভুল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথোফিন, রাইপেনিং এজেন্ট এটা ফুড সায়েন্সে আছে, সারা পৃথিবীতেই এটা ব্যবহার হচ্ছে। তা নাহলে ফিলিপিন আর ব্রাজিলের কলা আমেরিকায় মানুষ খাচ্ছে কীভাবে?

‘যেটা বলা হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, বিষ দিয়ে পাকানো হচ্ছে, এখন রাইপেনিং এজেন্টকে বিষ বলে তাহলে ফুড সায়েন্স কোথায় যাবে’ প্রশ্ন তোলেন ড, নাজমা।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের সদস্য ড. মো. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, ‘কাঁচা আম আমি কিন্তু বাজার থেকে কিনে খাই। সুতরাং ওইটা যদি খেতে পারি, এটাকে পাকাব সেটা খেতে পারব না কেন?’

‘এটা ধ্বংস করাটা কিন্তু আমার মতে, এটা জাতীয় ক্ষতি। ওই আমগুলো অনিরপদ তা নয়, স্বাদ কম’, বলেন ড. ইকবাল।

ক্ষতিকর রায়সনিকের উপস্থিতি বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের তাৎক্ষণিক পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত মত বলে মনে করেন।

এ সব বিষয়ে নির্বাহী হাকিম মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বিশেষজ্ঞদের কথা মতো কাজ করি না। আমরা কাজ করি আইনের ভাষায়। আইনে যেখানে যেটা আছে সেভাবেই কাজ করি। বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন, এটা তাদের ব্যক্তিগত মতামত।’

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের সদস্য ড. মো. ইকবাল মনে করেন, ‘ইথোফিন বলেন আর ক্যালসিয়াম কার্বাইড বলেন, এটা তাৎক্ষণিক দেখে বা কিড দিয়ে মেজারমেন্ট করার কোনো উপায় নেই।

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীনও মনে করেন, ‘এটা গবেষণাগারে করতে হবে, মার্কেট প্লেসে করার কোনো বিষয় না।’

তাহলে নিরাপদ ফল খেতে হলে তদারকিটা কোথায় করতে হবে? সেটাও জানালেন এই দুই বিশেষজ্ঞ।

ড. ইকবাল বলেন, ‘আমের পুরোপুরি পুষ্টিগুণ যাতে মানুষ পায় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় একটি ক্যালেন্ডার করে দিয়েছে। বছরের কোন সময়ে আমগুলো পরিপক্ক হবে বা সেগুলো পাড়তে হবে। পরিপূর্ণ পরিপক্ক হলে পুরো নিউট্রেশনটা মানুষ পাবেন। সেটা না মানার জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’

ড. নাজমা শাহীন বলেন, ‘একটা ফসল বাজারে নিয়ে আসার পর কিন্তু দেখার বিষয় না। সেখানে সঠিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সেটা দেখলে হলে চাষীর উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারে আসা পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া তাতে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

এই দুই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ফল-মূল ও খাদ্যপণ্যের মান ঠিক রাখতে সারা বছরই সংশ্লিষ্টদের তদারকি দরকার।

 

এনটিভি