প্রাইভেট কারে দুই তরুণের লাশ: চার কারণ সামনে রেখে তদন্ত

রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে মোটর ওয়ার্কশপের দুই কর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের নাম রাকিব শেখ ও সিয়াম মজুমদার। এই দুই তরুণ ওই এলাকার গাড়ির ওয়ার্কশপের কর্মী ছিল। পুলিশ সম্ভাব্য চারটি কারণ সামনে রেখে ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত কেউ তাদের বিষ প্রয়োগে হত্যা করতে পারে। এর বাইরে গাড়ির রঙের বিষাক্ততার কারণে, না হয় তারা ভেজাল মদ পানে মারা যেতে পারে। আত্মহত্যাও সন্দেহের মধ্যে আছে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে শাহবাগ থানার পুলিশ তাদের অচেতন দেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তারা আগেই মারা গেছে। মৃত রাকিবের (১৭) বাবার নাম শেখ হানিফ। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার মুন্সিডাঙ্গা। আর সিয়ামের (১৯) বাবার নাম জসিম উদ্দিন। বাড়ি কুমিল্লার লালমাই উপজেলার উৎসব পদুয়া গ্রামে। সিয়াম সেগুনবাগিচায় কুরবান মোটরস নামের একটি গ্যারেজে কাজ করতেন এবং দোলাইরপাড় এলাকায় তাঁর চাচা জহিরুল ইসলামের বাসায় থাকতেন। রাকিব বাচ্চু অটোমোবাইলস নামের একটি গ্যারেজে কাজ করত। থাকত গ্যারেজ মালিক বাচ্চুর বাসায়।

দুজনের দেহ প্রথমে বাচ্চুই উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। বাচ্চু বলেন, দুজনেই নিয়মিত গাড়ির কাজ করত। মাঝেমধ্যে তারা গ্যারেজেই ঘুমাত। গত রাতে গ্যারেজের সামনে তারা একটি প্রাইভেট কারের সামনের দুই সিটে ঘুমিয়ে ছিল। প্রাইভেট কারের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। সকাল ৯টার দিকে অনেক ডেকেও সাড়া না পাওয়ায় দরজা ভেঙে তাদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, সেগুনবাগিচার নাভানা সিএনজি কনভারশন ওয়ার্কশপের সামনে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার রাখা ছিল রং করার জন্য। সেই গাড়ির ভেতরে দুজনকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের শরীরে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

সরেজমিন : সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রাইভেট কারটি নাভানা সিএনজি কনভারশন ওয়ার্কশপের সামনে রাখা রয়েছে। আশপাশের মানুষ ভিড় করে হা-হুতাশ করছে। জহির নামের একজন বলেন, সিয়াম তাঁর ভাতিজা। এক বছর ধরে তাঁর সঙ্গে থেকে গাড়ির রঙের কাজ করছিলেন। পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকায় তাঁর সঙ্গেই থাকতেন সিয়াম। সেখানে তাঁর গাড়ির গ্যারেজ আছে। এই প্রাইভেট কারের মালিক কাঞ্চন নামের একজন। গাড়িটি রং করার জন্য দিয়েছে। রাকিব ও সিয়াম গাড়িটি এখানে নিয়ে আসে।

স্থানীয়দের বক্তব্যের ভিত্তিতে শাহবাগ থানার ওসি বলেন, ‘দুজন গভীর রাত পর্যন্ত ওই গাড়ি রং করার কাজ করেছে। সকালে গাড়ির ভেতরেই তাদের অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের মৃত্যুর কারণ আমরা এখনই বলতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে, তারা কোনো বিষক্রিয়ায় মারা গেছে।’ ওসি বলেন, যেহেতু প্রাইভেট কারের ভেতরে অচেতন অবস্থায় তাদের পাওয়া যায়, এতে মনে হচ্ছে তারা হয়তো ভেজাল মদ পান করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওই অবস্থায় তাদের মৃত্যু হতে পারে। এর বাইরে কাজ করতে গিয়ে রঙের বিষাক্ততায় তাদের মৃত্যু হতে পারে। তাদের কেউ হত্যা করেছে বা তারা আত্মহত্যা করেছে—এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। যেহেতু তারা বয়সে তরুণ, তাই তাদের মৃত্যু ঘিরে অনেক রহস্য রয়েছে। তদন্ত ও ময়নাতদন্তের পর সঠিক তথ্য বলা যাবে।

ভাতিজা এখানে কেন গাড়ির রং করতে এসেছিলেন জানতে চাইলে জহির বলেন, এখানে রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ গ্যারেজ বানিয়ে তিনিও কাজ করেন। শুধু তিনি নয়, বাচ্চুসহ আরো অনেকে এখানে রাস্তার পাশে গাড়িতে রঙ করেন। সড়ক দখল করে ‘গ্যারেজ’ বানিয়ে অবৈধভাবে গাড়ি রং করায় পুলিশ, সিটি করপোরেশন কোনো বাধা দেয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কথা বলেই এখানে কাজ করি।’

এ সময় সেখানে উপস্থিত কমিউনিটি পুলিশ সদস্য মো. হাসু মিয়া প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাস্তা দখল করে এরা কিভাবে এখানে গাড়ি রং করে তার জানা নেই। রাতে তিনি এখানে ডিউটিতে ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গলিতে ছিলাম না, ভোরের দিকে এদের মৃত্যুর খবর পাই।

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শাহবাগ থানার ওসি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তবে নাভানা ওয়ার্কশপের সামনে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় সঠিক তথ্য পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

নাভানা ওয়ার্কশপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী শামীম ফেরদৌস এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা গাড়ি মেরামত ও রঙের কাজ গ্যারেজের ভেতরে করে থাকেন। রাস্তায় অন্যরা কাজ করে। মৃত দুই তরুণ তাঁদের কর্মী নয়।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ