প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি সাবেক ছাত্রলীগ নেতার: ‘ভাইয়া গ্রুপ’ থেকে সনাতন ধর্ম রক্ষা করুন

চট্টগ্রামের পটিয়া আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। সর্বশেষ টিকা কেলেঙ্কারিতেও জড়ায় তাঁর নাম। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার অন্যভাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের আলোচ্য বিষয় হলেন হুইপ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অভিজিৎ ধর বাপ্পি (১৯৮৪ ব্যাচ) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, চট্টগ্রামের পটিয়ার এই সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ভাইয়া গ্রুপের হাত থেকে পূজা কমিটিসহ অন্যান্য দেবত্ব সম্পত্তির কমিটিগুলোকে রক্ষা করতে হবে।

জানা যায়, গত সোমবার পটিয়া রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়। সেখানে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’

পটিয়ার সাধারণ মানুষের উদ্ধৃতি দিয়ে অভিজিৎ ধর বাপ্পি ফেসবুকে লেখেন, জন্মাষ্টমীর সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ‘সামশুল আলম বিচ্চু’। তিনি প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি আকারে লেখা এ পোস্টে আরো লিখেছেন, একমাত্র বাংলাদেশেই এই ‘ভাইয়া গ্রুপ’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় পূজা কমিটিসহ অন্যান্য দেবত্ব সম্পত্তির কমিটিগুলো।

অভিজিৎ ধর বাপ্পি যখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য ছিল। ছাত্রশিবিরকে কোণঠাসা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি সক্রিয় রাখতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এ কারণে ছাত্রলীগ নেতা অভিজিৎ ধর বাপ্পিকে হত্যা মামলার আসামিও হতে হয়েছিল। তবে সেই হত্যা মামলার দায় থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন আদালতের রায়ে। আশির দশকের ডাকসাইটে এই ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে লন্ডনে আছেন। সেখানে বসে দেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি লেখেন। এখনো চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অনেক নেতা অভিজিৎ ধর বাপ্পিকে রাজনৈতিক গুরু মানেন।

খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্যের নামে সড়কের নাম দিয়েছেন হুইপ সামশুল

স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনে জীবন বাজি রাখা ছাত্রনেতা অভিজিৎ ধর বাপ্পী ধিক্কার জানিয়ে বলেছেন, ‘সিনেমার টিকিট ব্ল্যাকার থেকে এখন হুইপ হয়েছে সামশুল হক চৌধুরী। অনেকের কোলেই সে দোল খেয়েছে। বিএনপির কোলে খেয়েছে, জাতীয় পার্টির কোলে দোল খেয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগের কোলে দোল খাচ্ছে।’

লন্ডন থেকে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বিচ্ছুর আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুঃসময়ের এই কণ্ডারি জানালেন, ‘বিচ্ছুকে আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। সিগারেটের ব্ল্যাকার, শাড়ির চোরাকারবার, আদম ব্যাপারী, জায়গার দালালি করত।’

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়া অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর নামে পটিয়ায় সড়কের নামকরণ করেছে বিতর্কিত এই হুইপ।’ ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়েই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাপ্পী বললেন খোলামেলা কথা।

অভিজিৎ ধর বাপ্পী ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সহসভাপতি ছিলেন। স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অকুতোভয় এই ছাত্রনেতা হামলা-মামলা-জুলুমের শিকার হন। তবু জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দলকে আঁকড়ে ছিলেন। কিন্তু অসংখ্য রাজনৈতিক মামলার মুখে শেষ পর্যন্ত দেশে থিতু হতে পারেননি। সুদূর লন্ডনে থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার রয়েছেন দেশের অভ্যন্তরে ঘটা নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব পাওয়া প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, অনিয়মের বিরুদ্ধেও কথা বলে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু করে দেন। সর্বশেষ তিনি যেন বিস্ফোরণ ঘটালেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে নিয়ে।

অভিজিৎ ধর বাপ্পী বলেন, “একদিন আমি অবাক হয়ে যাই সিগারেটের ব্ল্যাকার ও সিনেমার টিকিট কারবারি বিচ্ছুকে দেখে! এমইএস কলেজের সাবেক ভিপি মামুনুর রশিদ মামুনের অফিসে একদিন দেখি তাকে। দেখেই আমি জানতে চাইলাম, কিরে বিচ্ছু এখানে কী করে? তখন মামুন আমাকে বলল, ‘সামশু ভাই আমাদের দলে চলে এসেছেন।’ এরপর সামশু আমাকে ওই রুমের বাইরে এসে একটি গাড়ি দেখাল। পাজেরো জিপ। বলল, ‘এটি আমার গাড়ি!’ সেটি ২০-২২ বছর আগের কথা। এখন সেই সামশুই জাতীয় সংসদের হুইপ!”

অভিজিৎ ধর বাপ্পী বলেন, ‘সামশু বিচ্ছুর আগ্রাসনের কারণে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন করোনাকালে অসহায় মানুষের জন্য আইসোলেশন সেন্টার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিচ্ছু সেখানে বাধা দিয়েছিল। একুশে পদকপ্রাপ্ত হায়দার ভাই নিরন্ন মানুষের জন্য খাদ্য বিতরণের চেষ্টা করেছিলেন। তা-ও বাধার কারণে সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে করোনার ভ্যাকসিন আনলেন, তা চুরি করে বিক্রি করেছে হুইপ ও তার ভাইয়েরা।’

সর্বশেষ বিচ্ছু যা করেছেন তা মেনে নেওয়া যায় না উল্লেখ করে বাপ্পি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ভয়াবহ রক্তাক্ত শোকের ঘটনা ঘটেছিল। আমাদের অস্তিত্বের সাথে, আমাদের আবেগের সাথে জড়িত বঙ্গবন্ধু। সেই বঙ্গবন্ধু, সেই জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়া অধ্যাপক নুরুল ইসলামের নামে পটিয়ার আদালত ভবনের পাশের সড়কটির নামকরণ করেছে হুইপ। সে নাকি আওয়ামী লীগার! এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভাবতেই অবাক লাগে, সিনেমার টিকিট ব্ল্যাকার কিভাবে যে হুইপ হয়ে যায়! কী আর বলব!’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ