প্রস্তুত চামড়া ব্যবসায়ীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিমুখী খাত চামড়া শিল্প। বছর জুড়ে এই শিল্প মালিকরা যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করেন তার প্রায় অর্ধেকই আসে কোরবানির ঈদে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গত কোরবানিতে দেশব্যাপী ১ কোটি পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয় প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ চামড়া। আর এবার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৫ থেকে ৩০ লাখ।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করা হয় তবে ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার চামড়া সংগ্রহ করবেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, চামড়া সংগ্রহে আমরা যারা পাইকারী ব্যবসায়ীরা রয়েছি তাদের মূল প্রস্তুতি হচ্ছে টাকার সংগ্রহ। তাই এখন তাকিয়ে আছি ট্যানারি মালিকদের দিকে। কারণ তাদের কাছে আমাদের প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে এবং ব্যাংক থেকে ঋণের যে আবেদন করা হয়েছে তা এখনও পাওয়া যায়নি। তাই ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ধার-দেনা করে মূলধন জোগাতে চেষ্টা করছে। আশা করি, ঈদের আগে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাবে ও ট্যানারি মালিকদের থেকে বকেয়া টাকাগুলোর একটা অংশ পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে পোস্তায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ হবে বলেই আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, চামড়া শিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। তাই এটিকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে সরকারকে আরো আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। তবে আমি এটিও বলতে চাই না যে সরকার আন্তরিক না। আরো বেশি আন্তরিক হওয়ার কথা বলছি। বর্তমানে বিশ্ব বাজারে চামড়ার দর ভালো নয়। সাভারে চামড়া শিল্পনগরী এখন পর্যন্ত ভালোভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি। সেখানকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার  আরো উন্নয়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। যার কারণে বিদেশ থেকে ক্রেতা আসা কমে যাচ্ছে। তাই খুব তাড়াতাড়ি দেশের চামড়া শিল্পনগরী অবস্থা ভালো পর্যায়ে নিতে হবে। যাতে বাংলাদেশে ক্রেতা আসা বাড়ে।

এদিকে এ বছর প্রচুর পরিমাণে লবণ আমদানি ও পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও ইতিমধ্যে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট রয়েছে জানিয়ে বস্তা প্রতি একশ টাকা বাড়িয়ে ফেলেছেন লবণ ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন আগেও বস্তা প্রতি লবণ বিক্রি হয়েছে ৯৪০ থেকে ৯৫০ টাকা, কিন্তু এখন তা কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৪০ থেকে এক হাজার ৫০ টাকা। আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি এই কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে যেন লবণের দাম না বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

লবণের দাম বেড়েছে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবীর। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রতিবারই আমাদের লবণ ব্যবসায়ীদের ওপর দোষ চাপান যে আমরা লবণের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমি বলছি ২০১৬ সালে লবণের বাজারের অস্থিরতার পরে তা নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত একই রয়েছে লবণের দাম, একটুও দাম বাড়েনি এবং বাড়বেও না। যারা এ অভিযোগ করছেন তারা দেশের বাজারে লবণের দামের মিথ্যা অস্থিরতা দেখিয়ে নিজেরা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে আলাদা ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে চাচ্ছে। সরাসরি বলতে গেলে আসলে তারা একটা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। আর তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু লবণ ব্যবসায়ীরাও জড়িত রয়েছে।

অন্য দিকে বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কোরবানি উপলক্ষে ব্যাংক ঋণ পাওয়া সাপেক্ষে বকেয়া পরিশোধের চিন্তা রয়েছে আমাদের। আর কোরবানি উপলক্ষে এ সময়ে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী বেড়ে যায়, আমরা এবার ব্যাংক থেকে ঋণ না পেলে আমাদের এই আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ যেমন বাড়বে তেমনি চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশ বেড়ে যাবে। কারণ তারা কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করবে এবং চামড়া কীভাবে লবণজাত করতে হয় এ সম্পর্কেও তাদের ধারণা খুবই কম থাকায় নষ্ট করে ফেলে। এসব কারণে আমাদের লোকসানের আশঙ্কা থেকেই যায়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে দেওয়া ৪৬৫ কোটি টাকা ঋণের বেশিরভাগই পরিশোধ করা হয়নি। যে কারণে এ খাতে ফের বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমে গেছে।

রাইজিংবিডি