প্রশিক্ষণের ফলে বাড়ছে সন্তানদের সাথে ইতিবাচক আচরণের চর্চা

নিজস্ব প্রতিবেদক:  মুক্তা রানী, হরিজন পল্লীর বাসিন্দা। দুই সন্তানের জননী। বড় মেয়ের বয়স ৭বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ৩ বছর।প্রচলিতনিয়মেয় আর দশ জনের মতোই তিনিওসন্তান লালন পালন করতেন। কিন্ত সন্তানকে না মারধর করে, না বোকাঝোকা করেও যে মানুষ করা যায় সে বিষয়ে তিনি এসিডিতে প্রথম ‘দৈনন্দিন শিশু লালন পালনে ইতিবাচক নিয়মানু বর্তিতা’প্রশিক্ষণপান ২০১৭ সালে। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পরে তার মধ্যে কিছুপরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সন্তান বিরক্ত করলে তিনি সহজেই রেগে যেতেন, কিন্ত প্রশিক্ষণে লব্ধ কিছু কৌশলের মাধ্যমে এখন তিনি তার রাগ সহজেই নিয়ন্ত্রণ  করতে পারছেন।তিনি জানান, সন্তানদের সাথে এখন আর খারাপ ব্যবহার করেন না।

তিনি বিশ্বাস করেন,সস্তানদের মারধর কিংবা হুমকিধামকি দিলে অভিভাবক ও সন্তানদের মাঝে সম্পর্ক নষ্টহয়। প্রশিক্ষণ পাওয়ার আগে তিনি এই বিষয় গুলো জানতেন না। সন্তানদের উষ্ণতা, কাঠামো ও দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য কিভাবে নির্ধারণ করতে হয় সে বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষণে শিখেছেন এবং সন্তানদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরী করেছেন।

মুক্তা রানীর বড় মেয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারিপ্রশিক্ষণের পর তার মা সন্তান লালন পালনে আগের চেয়ে আরো বেশী যত্নবান হয়েছেন। মুক্তা রানীর মতোই এরকম অনেকেই আছেন যারা প্রশিক্ষণ পেয়ে সন্তান লালন পালনে তাদের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তনকরেছেন।এসিডি তার কর্ম এলাকায় ২০১৭ সাল থেকে এপর্যন্ত ১৬ ব্যাচকে (৩২০ জন) প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

তাদের অনেকেই সন্তান লালন পালনে ইতিবাচক নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলছে।সরেজমিনে কর্ম এলাকার ৮০জন পিতা মাতা ও ৭৩ জন সন্তানের মধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের মাধ্যমে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়প্রশিক্ষণের আগে তারা সন্তানের সাথে কি ধরনের আচরণ করতেন এবংপ্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তাদের আচরণের কি ধরণেরপরিবর্তন হয়েছেনা আদৌ কোন পরিবর্তন হয়নি।

সেখানে দেখা যায় প্রশিক্ষণ পাওয়ার আগে ২৭ জন পিতা মাতা সন্তানের সাথে বকাঝোকা,রাগারাগি, ও মারধর করত, প্রশিক্ষণের পরে১৬জন বলছেন আগের চেয়ে ভালো ব্যবহার, ১০জন খুব ভালো ব্যবহার ও ১ জনএখন ও মারধর বন্ধ করলেও বকাঝোকা ও রাগা রাগি করছেন।

একই বিষয় নিয়ে ঐ পিতা মাতার সন্তানদের সাথে কথা হয়। সন্তানদের মধ্যে ২৬ জন বলেন আগের  চেয়ে পিতা মাতারা তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন এবং ১ জন শিশু জানায় তার বাবার এখনও কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রশিক্ষণেরআগে শুধু বকাঝোকা ও রাগারাগি করত এমন ২০ জন পিতামাতা।

তাদের মধ্যে ১০ জন আগের চেয়ে ভালো ব্যবহার ও ১০ জন খুব ভালো ব্যবহার করছেন বলে জানান। তাদেরস ন্তানদের মধ্যে ১৯ জন বলেন আগের চেয়ে ভালো ব্যবহার করছেনএবং ১ জনএখন ও রাগারাগি করছেন।

মারধর ও বকাঝোকা করত ২ জন পিতা মাতা, তারা সকলেই আগের চেয়ে সন্তানের সাথে ভালো ব্যবহার করছেন। তাদের সন্তানরাও একই কথা বলেন।প্রশিক্ষণের আগে শুধু মারধর করত এমন ৪জন পিতা মাতা, প্রশিক্ষণের পরে তারা সকলেই আগের চেয়ে সন্তান লালন পালনে যত্নবান হয়েছেন।

আবার রাগারাগি ও মারধর করত ৬ জন,প্রশিক্ষণের পর মারধর সকলেই বন্ধ করলেও ৩ জন এখনও সন্তানের সাথে রাগারাগি করছেন ও ৩ জন আগের চেয়ে ভালো ব্যবহার করছেন। তাদের সন্তানরাও বলছেন পিতামাতারা আগের চেয়ে ভালো ব্যবহারকরছেন।

জরিপে এমন ১৪ জন পিতা মাতা আমরা পেয়েছি যারা সন্তানের সাথে শুধু রাগারাগি করত। তাদের মধ্যে এখন ১০ জন পিতা মাতা আগের চেয়ে ভালো ব্যবহার ও ৪ জন খুব ভালো ব্যবহার করছেন।

সন্তানকে শুধু বকাঝোকা করত ৪জন,তাদের মধ্যে ২ জন আগের চেয়ে ভালো ব্যবহার এবংবাকী ২ জন খুব ভালো ব্যবহার করছেন। প্রশিক্ষণ পাওয়ার আগে ও ১ জন সন্তানের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন এবং এখন ও তিনিআরো ভালো ব্যবহার করছেন।

দৈনন্দিন শিশু লালন পালনে ইতিবাচক নিয়মানু বর্তিতার প্রশিক্ষণের ফলে পিতা মাতারা সন্তান লালন পালনে আগের চেয়ে অনেক বেশী দায়িত্বশীল হয়েছে।

যা এই জরিপের মাধ্যমে উঠে এসেছে। মুক্তা রানীর মতো অনেকমা-ই এখন আর সন্তানদের উপর আর অহেতুক রেগে যান না বা মারধর করেন না। তারা এখন বিশ্বাস করছেন সন্তান লালন পালনের জন্য শাস্তিই একমাত্র পথ নয়, ভালোবেসে ও বকাঝোকা না করে ওসন্তান কে মানুষ করা যায়।

তাই প্রশিক্ষণ প্রাপ্তপিতা মাতারা ‘দৈনন্দিন শিশু লালন পালনে ইতিবাচক নিয়মানুবর্তিতার প্রশিক্ষণ’আরো বেশী জন গোষ্ঠীরমধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার আহব্বান জানান।

স/আ.মি