পাবনায় ১৯১টি ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পর্যাপ্ত লোকবল ও আর্থিক সংকটের কারণে পাবনায় ১৯১টি ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। ফলে কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ইটভাটায় পরিবেশদূষণ চলছেই। সেই সঙ্গে বাড়ছে আশপাশের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি।

পাবনা জেলা ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে অভিযান চালানো হয়। তখন ১১টি ইটভাটা বন্ধ করা হয়। জেলার নয়টি উপজেলায় এখনো অবৈধভাবে চলছে আরও ১৯১টি ইটভাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিটি অভিযান চালাতে অন্তত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রশাসনের সে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ নেই। এ ছাড়া লোকবল ও পরিবহনসংকট আছে। ফলে অভিযান চালানোও থেমে আছে।

অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। সহযোগিতা করে জেলা প্রশাসন। পাবনায় অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের জুন মাসে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, অভিযান চালাতে ‘বিশেষ ব্যয়’ নামের খাত থেকে খরচ করা হয়। প্রতিবছরই এই খাতে অর্থ বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এর পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়। ২০১৯ সালে পরিবহন খরচের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেলেও বিশেষ ব্যয় খাতে বরাদ্দ পায়নি অধিদপ্তর।

ডিসেম্বরের অভিযানে অনুমোদনহীন ১১টি ইটভাটা ধ্বংসের পাশাপাশি এগুলো থেকে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, টাকাগুলো এরই মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন অনুমোদনহীন ইটভাটাগুলোকে নতুন করে নবায়ন করতে বলা হচ্ছে।

পাবনায় ইটভাটা আছে ২২৮টি। এর মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন আছে ৩৭টির। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ৭৮টি ইটভাটা আছে সদর উপজেলায়। এ ছাড়া ঈশ্বরদীতে ৬২, বেড়ায় ২৩, সুজানগরে ২০, সাঁথিয়ায় ১৩, চাটমোহরে ১২, ফরিদপুরে ১১, ভাঙ্গুড়ায় ৭ ও আটঘরিয়ায় ইটভাটা ২টি। এগুলোর মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির টানেল কিলন (সুরঙ্গ চিমনি) ইটভাটা আছে মাত্র ১টি। এ ছাড়া ড্রাম চিমনির ৩টি, ঝিগঝ্যাগ পদ্ধতির ৮৪টি, সনাতন পদ্ধতির ১২০ ও ফিক্সড (স্থায়ী) চিমনির ইটভাটা ১৪০টি।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম হোসেন বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটাগুলোর বৈধ কাগজপত্র করাতে সমিতির পক্ষ থেকে মালিকদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ভাটাগুলো বৈধ কাগজপত্র তৈরি না করলে সদস্যপদ বাদ দেওয়া হবে। কারণ, আমরাও চাই না পরিবেশের ক্ষতি হোক।’

জেলার প্রবীণ চিকিৎসক সরওয়ার জাহান বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে। ধোঁয়া নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে সাইনোসাইটিস, ব্রঙ্কাইটিসসহ শ্বাস–প্রশ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। শিশুদের হতে পারে নিউমোনিয়া, সিলিকোসিস ও ফুসফুসের ক্যানসারের মতো রোগ।

পাবনা সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা আছে হিমাইতপুর ইউনিয়নের চর বাঙাবাড়ি গ্রামে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ থেকে খানিক দূরেই এই গ্রাম। গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ও আবাসিক এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ইটভাটা। সেখানে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কালো ধোঁয়ায় বিবর্ণ হয়ে গেছে গ্রামের গাছপালা।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায়ও ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। কালো ধোঁয়ায় গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মোছাদ্দেক আলী বলেন, ভাটার ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে মাঝেমধ্যে। ফসলি জমিও বিবর্ণ হয়ে যায়। এগুলো দেখার কেউ নেই।

তবে এই বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ দাবি করেন, অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। কিছু ইটভাটা অনুমোদন নবায়ন করেনি। সেগুলো নবায়ন করতে বলা হয়েছে।