পানির সংকট প্রতিদিন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘ঘুম থেকে উঠেই কলস নিয়ে ছুটি। চার-পাঁচ বাড়ি ঘুরে এক বাড়িতে পানি মেলে। কোনো দিন তা-ও পাই না। তখন ওয়াসার পানির গাড়িই ভরসা।’ বলছিলেন মিরপুর ১১, বি ব্লকের স্থায়ী বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন ব্যাপারী। তাঁর মতো বি ব্লকের ১ থেকে ১০ নম্বর সড়কে বাস করা প্রায় ৫০ হাজার মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা হলো ঠিকমতো পানি না পাওয়া।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওয়াসার লাইনে পানির চাপ খুব কম। মোটর দিয়ে ওয়াসার মূল লাইন থেকে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বাসাবাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে পানি আসে। আর ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মী অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে এলাকায় পানি সরবরাহ করে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিকজন। গতকাল মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে পানি নেই। যেখানে অল্পস্বল্প পানি আসছে তা ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। ওয়াসার দুজন ঠিকা শ্রমিক (অস্থায়ী) আবুল হাসেম ও জোবেদ আলী ওয়াসার পানির লাইন পরীক্ষা করছিলেন। তাঁরা ৬ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাসার সামনে নালার ঢাকনা তুলতেই চোখে পড়ল নীল রঙের ছয়টি পানির লাইন। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, নর্দমার ভেতর দিয়ে পানির এই অবৈধ সংযোগ ওয়াসার কর্মীরাই দিয়েছেন। এভাবেই নালার পানি ওয়াসার মূল লাইনে প্রবেশ করে।

৬ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাসার বাসিন্দা মোহাম্মদ তসলিম জানান, ‘পাম্পওয়ালা সারা দিনেই দু-তিন ঘণ্টা পানি ছাড়ে। কিন্তু পানির চাপ এতই কম থাকে যে অনেক সময় মোটরও পানি টেনে আনতে পারে না। আর এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেনাযুক্ত ময়লা পানি।

১২ নম্বর মূল সড়কের পাশ ঘেঁষে ওয়াসার (মডস জোন-১০) মসজিদে তৈয়্যবা পানির পাম্প। এখানে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে। কথা হয় সহকারী পাম্প অপারেটর সাজু সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের সড়কের সংস্কারকাজ চলার সময় পাম্পের চাবি (পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চাপও কম। অবৈধ সংযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এই এলাকার প্রতিটি ভবনেই কমবেশি পানির অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এর বাইরে দুটি বিহারি ক্যাম্পেও (আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্প) পানির অনেক অবৈধ সংযোগ রয়েছে। তবে অবৈধ সংযোগের বিষয়ে তিনি কোনো কিছু জানেন না বলে জানান।

মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার দায়িত্বে থাকা ওয়াসার উপসহকারী প্রকৌশলী রায়হান চৌধুরী জানান, বর্তমানে ওই এলাকার বাসাবাড়িতে অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে তিনি জানেন না। তবে বিহারি ক্যাম্পে থাকতে পারে। বেশ কিছু দিন আগে তিনি এ রকম অবৈধ সংযোগ নিজে বিচ্ছিন্ন করেছেন। নতুন পাম্প বসানোর কাজ শুরু হয়েছে, শেষ হলেই ওই এলাকায় পানির সমস্যা থাকবে না।

আর ঢাকা ওয়াসা, মডস জোন-১০-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল হাবীব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। আমাদের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী এ অসাধু কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাঁদের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হবে। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’