পদ্মা-যমুনার ২২ স্থান ভাঙন ঝুঁকিতে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কয়েক দিন আগের মাঝারি আকারের বন্যা ও উজানের মৌসুমি পানি নেমে আসার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হারে নদী ভাঙছে। এতে সড়ক, দোকানপাট, বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার এমনকি হাসপাতাল বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে, কোথাও উপজেলা সদর চিরতরে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভুক্তভোগী মানুষের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নদী ভাঙনের পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করে থাকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)। সংস্থাটি ‘নদীভাঙন পূর্বাভাস-২০১৮’ সালে একটি গবেষণা করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এ বছর কেবল দেশের প্রধান দুই নদী অববাহিকা ব্রহ্মপূত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মার ২২টি স্থান ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। গত বছরও সংস্থাটি ২৯ স্থানে ভাঙনের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এরমধ্যে ২৫ স্থানই ভেঙেছে। পূর্বাভাসের ৮৬ শতাংশই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সংস্থাটির পূর্বাভাসকৃত স্থানগুলোর একটি শরীয়তপুরের নড়িয়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়িয়ার কেদারপুর এবং মুক্তারের চর এলাকায় পদ্মা নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে অতিবৃষ্টি থেকে ব্রহ্মপূত্র নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছিল। এরপর চলছে বর্ষা মৌসুম। বন্যার পানি এবং মৌসুমি পানি ব্রহ্মপূত্র-যমুনা হয়ে পদ্মায় পড়ছে। সেই পানিই ভেঙে নিচ্ছে নড়িয়া উপজেলা। পরিস্থিতি এমনই আর ৬০-৬৫ মিটার ভাঙলেই উপজেলার মানুষের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

নড়িয়া পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম বাবর আলী সোমবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ভাঙনের যে মাত্রা তাতে যে কোনো সময় হাসপাতালটি বিলীন হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল রক্ষায় বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই এলাকা রক্ষায় ইতিমধ্যে সরকার ১৩শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কাজ শুরু করতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে।

স্থানীয় নাগরিক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রাজেশ মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ মিটার করে ভাঙছে। ভাঙন কবলিত স্থান থেকে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ৯০০ মিটারের মধ্যে আছে। উপজেলা সদরের গোডাউন এলাকা থেকে পদ্মার দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। এভাবে পৌর ভবনসহ উপজেলা সদরের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ অফিস নদীর কাছাকাছি চলে এসেছে। গত বছর এসবের দূরত্ব ছিল এক থেকে দেড় কিলোমিটার। গত বছর যদি নড়িয়া উপজেলা সদর রক্ষার পদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে এ বছর এতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ত না।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শুধু যে পদ্মা ব্রিজের কারণে নড়িয়া ভাঙছে তা বলা যাবে না। কেন না, মৌসুমে এমনিতেও ভাঙতে পারে। গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সিইজিআইএসের পূর্বাভাস আমলে নিয়ে নড়িয়াসহ ভাঙন কবলিত স্থানগুলো রক্ষার্থে মৌসুমের আগেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল। তাহলে আজকে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো না। তবে ব্যাগ ফেলে এখন ভাঙন কমানো যেতে পারে।

সিইজিআইএস’র তথ্যমতে, শুধু নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রই নয়, এ বছর মোট ৬টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। এ বছর ১১ জেলার ২২টি স্থানে ভাঙন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যেতে পারে। জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, রাজশাহী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারিপুর। সংস্থাটি বলছে, এবারের মৌসুমে ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা-গঙ্গা এবং ব্রহ্মপূত্র-যমুনা নদী পাড়ের প্রায় দুই হাজার ৩০০ হেক্টর এলাকা ভেঙে বিলীন হয়ে যেতে পারে। দেশের উত্তর থেকে মধ্য ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মধ্যে আছে এই এলাকা।

এরমধ্যে ৩০০ বসতবাড়ি, ১ হাজার ১৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৩ হাজার মিটার সড়ক, ২৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৬ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ২১টি মসজিদ-মন্দির, ৫টি হাটবাজার ও ১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে।

সিইজিআইএসের জুনিয়র স্পেশালিস্ট সুদীপ্ত কুমার হোড় বলেন, স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গবেষণা করে এ ২২ স্থান নদী ভাঙন ঝুঁকির স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা ভাঙনের তীব্রতা ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে মানুষকে সতর্ক করার কাজ করে থাকেন। সিইজিআইএসের উপনির্বাহী পরিচালক ড. মমিনুল হক সরকার যুগান্তরকে বলেন, পূর্বাভাসের ৭০ থেকে ৮৬ শতাংশ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়ে আসছে। নড়িয়াতেও তারা পতাকা লাগিয়েছেন। সেখানকার অবস্থা এবার বেশি খারাপ। প্রচুর এফোর্ট (উদ্যোগ) দিয়ে নড়িয়া রক্ষা করার বিকল্প নেই।