নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে চলছে পাশাপাশি দুটি পুকুর ভরাট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় পাশাপাশি দুটি বিশালাকার পুকুর ভরাট করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সিটি বাইপাশ রাস্তার ধারে অবস্থিত পুকুর দুটির মধ্যে একটি গত কয়েকদিন ধরে রাতে আঁধারে ট্রাকে করে বালু এনে ভরাট করা হচ্ছে।

 

আরেকটি অন্তত দুই-তিন মাস আগ থেকে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 
স্থানীয়রা জানান, নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় অবস্থিত সিটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশে বিশালকার পুকুরটি গত ১০-১২ দিন ধরে রাতের আঁধারে ট্রাকে করে বালু এসে ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরটি রাজশাহী নগরীর ব্যবসায়ী শুটকা মিয়ার হলেও তিনি প্রভাবশালী কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে দিয়ে ভরাট করে নিচ্ছেন। উচ্চ আদালত থেকে পুকুর ভরাট নিষেধাক্কা থাকায় এ নিয়ে ঝামেলা এড়াতে রাতের আঁধারে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে।

Rajshahi photo-24-08-16-7 copy
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কয়েকদিন আগেও যে পুকুরটিতে পানি টলমল করছিল। এখন সেখানে অধিকাংশজুড়ে বালু ফেলে ভরাট করে রাখা হয়েছে। যেভাবে দ্রুত ভরাটকাজ চলছে-তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হবে বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা।

 

  • ভরাট করার পরে পুকুরের জমিটি বিক্রি করে দেওয়া হবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের। এই কারণে তাদের দিয়েই পুকুরটি ভরাট করে নিচ্ছেন শুটকা মিয়া। পুকুরটি ভরাট করে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য তারা আবার প্লট আকারে জায়গা বিক্রির পরিকল্পনা করছেন স্থানীয় ওই প্রভাবশালীরা।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও শুটকা মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে তার একজন ঘনিষ্ট কর্মচারী দাবি করেন, পুকুরটি ভরাট করে জায়গা বিক্রি করার উদ্দেশ্যেই সেটি ভরাট করা হচ্ছে।

 

  • অন্যদিকে ওই পুকুরের উত্তর দিকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে সিটি বাইপাশ রাস্তার পূর্ব পাশে আরেকটি বিশালকার পুকুর ভরাট করছেন আসাদ ম-ল ও টুনু মিয়াসহ অন্তত ১০ জন। পুকুরটি তাদেরই মালিকানাধীন।

Rajshahi photo-24-08-16-8 copy
স্থানীয়রা জানান, এই পুকুর ভরাট হচ্ছে গত দুই-তিন মাস ধরে। অনেকটা কৌশলে পুকুরটি ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন জমির মালিকরা।

  • স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পুকুরটির পানি দিয়ে স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষরা গোসলসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। কিন্তু সেটি ভরাট শুরু হওয়ায় সে কাজগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। পুকুরটিতে সারা বছরই পানি থাকায় মৌসুমে এলাকায় কোথাও কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও ওই দুটি পুকুরই অন্যতম ভরসা হয়ে উঠে। কিন্তু পুকুর দুটি ভরাট করা হলে ওই এলাকায় আর পানির কোনো প্রকৃতিক উৎস থাকবে না বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘পুকুর এবং সকল প্রকার জলাশয় ভরাটকাজ উচ্চ আদালত থেকে নিষেধাক্কা জারি করা আছে। কিন্তু একের পর এক পুকুর ভরাট হচ্ছেই। আমাদের অগোচরেই এই পুকুরগুলো ভরাট হচ্ছে। আর যারা এগুলো করছে-তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো পদক্ষেপও নেওয়া যাচ্ছে না।’

 
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে হ্যারিটেজ রাজশাহীর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট করা হলে আদালত রাজশাহী নগরীতে সকল ধরনের জলাশয় ভরাটরোধে নিষেধাক্কা জারি করেন। ওই নিষেধাক্কা এখনো বলবত থাকলেও পুকুর ভরাট বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে রাজশাহীবাসীর মাঝে রয়েছে চরম ক্ষোভ।

স/আর