নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ প্রমাণে মরিয়া বিএনপি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

একদিকে অভিযোগ, অন্যদিকে অংশগ্রহণ— এ দুই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না— এ অভিযোগ শক্তভাবে প্রমাণ করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনি ত্রুটিগুলো দেশে-বিদেশে তুলে ধরে আগামী নির্বাচন ‘দলীয় সরকারের’ অধীনে না করার দাবিকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে এ কৌশলের রাজনৈতিক সাফল্য আসতে শুরু করেছে বিএনপির ঘরে। এমনটিই মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় অংশ নিচ্ছে। আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি। সরকারের নির্লজ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকারগুলোতে অংশ নিচ্ছি। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্বও প্রমাণিত হচ্ছে।’

শুক্রবার (২৯ জুন) এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না— এটা আমরা খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছি। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা ৩ সিটি নির্বাচনে কেন অংশগ্রহণ করেছি? এর উত্তর একটাই। উত্তর হলো— আমরা বারবার প্রমাণ করতে চাই।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনেই প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ তোলে বিএনপি। নির্বাচনি প্রচারের সময় দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার ওপর ৩ দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর নির্বাচনের দিন দুপুরে ভোট বর্জন করে দলটি। এতে পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় অংশ নেওয়ার বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হলেও পরে কুমিল্লা ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেয় তারা। আর নির্বাচনে ভোট কারচুপি, প্রশাসনের দলান্ধতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারক বলছেন, সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনে অভিযোগের পরও অংশ নেওয়ার মূল কারণ, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না— এই অভিযোগ প্রমাণ করা। একইসঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু হবে না, এর একটি আগাম বার্তাও দেশ-বিদেশে পৌঁছে দেওয়া। এই দুটি লক্ষ্য সামনে রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় অংশ নিয়েছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। প্রত্যেকটি নির্বাচনে কারচুপি, ভোট জাল হওয়ার পরও আমরা অংশ নিচ্ছি এ কারণে, বিশ্ববাসী-দেশবাসী দেখুক, শেখ হাসিনার অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। আগামী নির্বাচন তিনি তার অধীনে কীভাবে করতে চান।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণই হচ্ছে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা দেখছেন কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে। আমরা না গেলে একতরফা হতো। এখন সবাই দেখছেন, বুঝতে সক্ষম হয়েছেন এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না।’

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি মনে করেন আগামী নির্বাচনেও তিনি ভোট কারচুপি করবেন, ক্ষমতায় যাবেন, যেতে পারেন। আমাদের লক্ষ্য তাদের অধীনে প্রত্যেকটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু  বলেন, ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বড় কারণ হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি নির্বাচনের চেহারা মানুষ দেখছে, পৃথিবী দেখছে। এই অনিয়ম করে কেউ-ই ছাড় পায়নি। এর মধ্য দিয়ে ফল আসবে।’

বিএনপির প্রভাবশালী দুজন নেতা   জানিয়েছেন, খুলনা, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য-ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব বিষয় অভিযোগ আকারে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ঢাকাস্থ প্রতিনিধিদের কাছে তুলে দেওয়া হবে। আগামী ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসার সম্ভাবনা আছে বলেও কূটনৈতিক উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন।

বিএনপির কোনও কোনও নেতা মনে করছেন, বিএনপি যা প্রমাণ করতে চাইছে, এরই মধ্যে তার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের বক্তব্যের পর উদ্দেশ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি  বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ, এটা কেবল বিএনপিই বলছে না, দেশ-বিদেশের সবাই বলছে।’

বৃহস্পতিবার মার্শিয়া বার্নিকাট বলেছেন, ‘গাজীপুর নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের আটক করা হয়েছে অথবা তাদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন জনগণকে ভোট দিতে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে, অথবা বলা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার জন্য। অনেকে আবার ভোট দিতে গিয়ে দেখেছে, তাদের ভোট আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা তাদের সামনেই জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচনের আগেই শুধু নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে বিরোধী দলের মাঠপর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে।’

 

বাংলা ট্রিবিউন