নির্বাচনী বছরে কেন ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র বছর-খানেকের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এ মাসের শেষের দিকে ভারত সফরে যাচ্ছেন।

আগামী ২৫শে মে তিনি শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন করবেন বলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। পরদিন পশ্চিমবঙ্গে কবি নজরুলের নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গ্রহণ করবেন সাম্মানিক ডিলিট।

পশ্চিমবঙ্গের এই দুটি অনুষ্ঠানেই তার সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দেখা হওয়ারও সম্ভাবনা আছে, যদিও রাজ্য সরকার বিবিসিকে পরিষ্কার জানিয়েছে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তাদের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি।

এই পটভূমিতে কেন আবার এত কম সময়ের ব্যবধানে শেখ হাসিনার এই ভারত সফর ?

আসলে লন্ডনে গত মাসে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে যখন নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার দেখা হয়েছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই ভারত সফরের ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গিয়েছিল তখনই।

সেই অনুযায়ী ২৫শে মে নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতেই শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন।

পরদিন আসানসোলের কাছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেবেন সাম্মানিক ডিগ্রি।

যে পশ্চিমবঙ্গের বাধাতে তিস্তা চুক্তি আটকে আছে, সেই রাজ্যেই তার এই সফরে অবশ্য তিস্তার ছায়া তেমন পড়বে না বলেই বিশ্বাস করেন ঢাকায় সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী।

“আমার মনে হয় তিস্তা ইস্যু এখন অনেক ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে গেছে,” বলছিলেন তিনি।

মি. চক্রবর্তীর আরও ধারণা, “ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বলেই শেখ হাসিনা এই সফরে সম্মতি দিয়েছেন। তা ছাড়া, এই সফর প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও তার আরও এক দফা আলোচনার সুযোগ করে দেবে।”

কবি নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ার কাছে অবস্থিত যে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে ডিগ্রি দিয়ে সম্মান জানাচ্ছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারেরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথেও শেখ হাসিনার বৈঠকের সম্ভাবনা আছে।

সেখানকার অধ্যাপক অশিস মিস্ত্রি বলছিলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার সফর প্রথাগত কূটনীতির বাইরেও সম্পর্কের অন্য একটা দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

তার কথায়,”প্রোটোকলের কূটনীতির বাইরেও পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির যে একটা পরিসর আছে, কিংবা ট্র্যাক-টু ট্র্যাক-থ্রি যাই বলুন না কেন, সেই দিক থেকে কিন্তু আমাদের এখানে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সফর আলাদা গুরুত্ব বহন করছে।”

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যে তিস্তার মতো ইস্যুর এখনও মীমাংসা হয়নি, এই ধরনের ইনফর্মাল সফর – যেখানে দুই দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় – সেখানেই বরফ গলার প্রক্রিয়াটা শুরু হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।

“আর আমাদের দু’দেশের সম্পর্কটা যে শুধু ঢাকা-নতুন দিল্লির মধ্যেই সীমিত নয়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গেরও বড় ভূমিকা আছে, তা তো অতীতে বারে বারেই দেখা গেছে”, বলছিলেন অধ্যাপক মিস্ত্রি।

বস্তুত বিশ্বভারতী বা আসানসোলে মমতা ব্যানার্জি ও শেখ হাসিনার মধ্যে একান্ত আলোচনা হতে পারে, সেই সম্ভাবনা প্রবল।

কিন্তু মমতা ব্যানার্জির ক্যাবিনেটে সেচমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি বিবিসিকে পরিষ্কার জানাচ্ছেন, তিস্তার এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে জল ভাগাভাগির চুক্তি করার কোনও অবস্থাই নেই।

“এই শুখা মরশুমে তিস্তায় জল নেই বললেই চলে। উজানে যেভাবে সিকিম তিস্তার ওপর একের পর এক বাঁধ দিয়েছে তাতে এককালের ভরা নদী তিস্তা এখন একেবারে শুকিয়ে গেছে, আমাদের চাষের প্রয়োজনই মিটছে না।”

“আমরা মনে করি তিস্তায় জলের প্রবাহ না বাড়িয়ে যদি চুক্তি করা হয় তাহলে তা কারোরই কাজে আসবে না, কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারবে না। ফলে এখন চুক্তি করাটাই তো অর্থহীন,” বলছিলেন মি ব্যানার্জি।

ফলে বাংলাদেশে নির্বাচনী বছরে শেখ হাসিনার এই পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত সফর তিস্তা নিয়ে জট খুলতে পারবে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিবিসি বাংলা